সাঈদীর রিভিউ আবেদন শুনানি আজ

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পূর্নবিবেচনার (রিভিউ) আর্জি জানিয়ে আনা আবেদন শুনানির জন্য আজ রোববার,১৪ মে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস.কে.) সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চে আজকের কার্যতালিকার ৩০ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে মামলাটি। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন-বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাছান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হুসেইন হায়দার।

গত ৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ মামলাটি শুনানির জন্য ১৪ মে দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছিল।

আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় পূর্নবিবেচনার (রিভিউ) করে মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানিয়ে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষে আবেদন করা হয়। রায় পূর্নবিবেচনা চেয়ে ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনের সঙ্গে ৬৫৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সৈয়দ মামুন মাহবুব সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে এ রিভিউ আবেদন দাখিল করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আসামির সাজা বাড়ানোর জন্য প্রথম রায় রিভিউ’র আবেদন করে।

এর আগে জামায়াতের আরেক নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া যাবজ্জীবন রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল। আপিলে কাদের মোল্লার দন্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আপিলের রায়ের রিভিউ করেছিল আসামিপক্ষ। রিভিউতেও দণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। পরে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। ৬১৪ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে সংক্ষদ্ধরা রিভিউ দায়েরের সূযোগ পেয়ে থাকেন। সে অনুযায়ি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষ রায় রিভিউর আবেদন দাখিল করে।

গত বছরের ১৭ জানুয়ারি আপিলের রায় থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন সাঈদী। মোট ৯০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাস পেতে ১৬টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনে মৃত্যুদণ্ড আর্জির পক্ষে পাঁচটি যুক্তি দেখানো হয়।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে আনা আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেছিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তৎকালীণ প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চে এ রায় ঘোষনা করা হয়। বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেয়া হয়। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা ছিলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (বর্তমান প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। রায় দেওয়া বিচারপতিদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগে চার্জ গঠন করেছিল ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ১২টিতে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুইটি আপিল দাখিল করে। যে সব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল সে অভিযোগগুলোতে আপিলে দন্ডের আর্জি জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।

আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ১৪ মে,২০১৭