সিলেটে ১৮ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

এ অঞ্চলে বোরো আবাদ যথাযথ হওয়ায় এবার ১৮ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় জানিয়েছে, এ বছর সিলেট অঞ্চলের চার জেলায় বোরোর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন। আবাদ হয়েছে চার লাখ ৭৪ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মজুমদার মো. ইলিয়াস বলেছেন, প্রতিবছরই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালে অকাল বন্যায় এ অঞ্চলের ৬০ ভাগ ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। তবুও বোরো উৎপাদন হয় ১০ লাখ মেট্রিক টন। বছরে অন্তত সাড়ে ১৫ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত চাল উৎপাদন হয় বলে জানান আঞ্চলিক কৃষি অফিসের তথ্য প্রদানকারি এ কর্মকর্তা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সিলেট অঞ্চলে চার লাখ ২৭ হাজার ৫৮৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫ মেট্রিক টন চাল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আবাদকৃত চার লাখ ৫১ হাজার ৮৬৪ হেক্টরে উৎপাদন হয় ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চার লাখ ৬১ হাজার জমিতে বোরো আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চার লাখ ৬৫ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন চাল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ অঞ্চলে চার লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হলেও আগাম বন্যায় অধিকাংশ হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর ১০ লাখ ৩২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন সম্ভব হয়। বন্যায় ক্ষতি হলেও পরের বছর এ অঞ্চলে বাম্পার ফলন হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ১৯ লাখ ২৯ হাজার ২৩ মেট্রিক টন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে চার লাখ ৭৮ হাজার ৮৬১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন উৎপাদন সম্ভব হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর সিলেট অঞ্চলে ৮৮ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, তিন লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও ১০ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে হাইব্রিড লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান কিছুটা কম আবাদ হয়েছে। চার জেলা নিয়ে গঠিত এ অঞ্চলে বোরো আবাদ সবচেয়ে বেশি হয় সুনামগঞ্জ জেলায়। হাওরাঞ্চল খ্যাত সুনামগঞ্জে এবার দুই লাখ ১৯ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যদিও এ জেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। হবিগঞ্জ জেলায় এবার আবাদ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার একশ’ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সিলেট জেলায় আবাদ হয়েছে ৮০ হাজার ৫৬৫ হেক্টর ও মৌলভীবাজার জেলায় ৫৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে।

আবাদ অনুযায়ী, বিভাগে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশই রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় আট লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন চাল লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। হবিগঞ্জে চার লাখ ৯৪ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন, সিলেটে তিন লাখ দুই হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন এবং মৌলভীবাজারে দুই লাখ চার হাজার ৮২২ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষক ওলিউর রহমান তানিম বলেন, এ বছর আমরা ৬০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। আশা করছি, অন্যবছরের চেয়ে এবার ভাল ফলন হবে। কৃষিবিদ মজুমদার ইলিয়াস বলেন, সিলেট অঞ্চলে প্রতিবছরই খাদ্য চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি ধান উৎপাদন হয়। এর সিংহভাগই উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে। সিলেট বিভাগে বছরে খাদ্য চাহিদা ১৯ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন। বোরো মৌসুমে ভাল ফলন হলে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত চাল অন্যদের দেওয়া সম্ভব হয়। তিনি বলেন, কৃষকরা এখন ধানের চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত।অনুক’ল পরিবেশ থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে। আমরা নিয়মিত কৃষকদের খোঁজ নিচ্ছি, তাদেরকে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি কৃষকরা এবারও ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান