সূচক নয়, কখন এবং কোথায় বিনিয়োগ করছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

ছায়েদুর রহমান:

পুঁজিবাজারের এখনকার টার্নওভার ও সূচকের দিক থেকে আমার মতামত সম্পর্কে বলতে চাই, যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে একজন মানুষ যে বিষয়টি যেভাবে বোঝেন বা মূল্যায়ন করতে চান, তিনি সেটা ওইভাবেই বুঝবেন। আমরা দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারের সঙ্গে আছি, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, যেকোনো পুঁজিবাজারে একসময় সংশোধন আসে। আবার সংশোধনের পরে সেটা ধীরে ধীরে উচ্চমাত্রায় যায়। তার একটি বাস্তব উদাহরণ আমি বলি, ২০০৭ সালে ভারতের ইন্ডাস্ট্রি কোথায় চলে গিয়েছিল, কী ধরনের পরিবর্তন এসেছিল, চীনের বাজারেরও ক্ষতি হয়েছিল। ভারতের পুঁজিবাজারের সূচক এখন ৭ হাজার থেকে প্রায় ৩১ হাজারে চলে এসেছে। অথচ ১০ বছর আগে কেমন ছিল? আশা করা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেরও উন্নতি হবে।

ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার দেখা করার সুযোগ হয়েছে। আমরা একসঙ্গে ভিজিটে গিয়েছিলাম। তাদের ওখানেও আমার একটা প্রশ্ন ছিল যে আপনাদের বাজারের যখন পতন ঘটল, তার প্রেক্ষাপট কী ছিল এবং পরে কী হলো? তাদের উত্তর ছিল, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। আর এগুলো যখন যা ঘটছে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে আমাদের পুঁজিবাজারের যে ক্ষতি হয়, তার ৯০ শতাংশ কমে না দেখে। সেখানে আইনের কী হচ্ছে বা সিস্টেমে কী সীমাবদ্ধতা ছিল, সেই বিষয়টা যদি আমরা দেখি, তাহলে পুরাতন কমিশনকে পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে যে পুরোপুরিভাবে বাজেট ঢেলে সাজিয়েছে, এই কমিশন আসার পরে পুঁজিবাজারে যত নিয়মকানুন বলবৎ আছে, প্রায় সব জায়গায় তারা হাত দিয়ে অনিয়ম বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এখন পুঁজিবাজার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, সেখানে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ তেরি করা সম্ভব না। কারণ বর্তমানে আমাদের সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনে এই লেটেস্ট সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট আসছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে মনিটরিং করছে, যেকোনো বিষয়ে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু যদি বাবল হয়, তাহলে কীভাবে মোকাবিলা করবে? সেটা কীভাবে হবে বা কারা করবে? হলেও তারা খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিয়ে সমাধান করে ফেলেন। আপনি দেখেছেন, ২০ বছর আগে যখন ঘূর্ণিঝর হয়েছে, তখন কিন্তু তার অনেক ক্ষতি হতো, কিন্তু বর্তমানে সেদিক থেকে এখন আর ক্ষতি হয় না। কারণ এখনকার আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের ম্যানেজমেন্টকে এমনভাবে ঢেলে সাজিয়েছে বা অভিজ্ঞ করে তুলছে যে ঘটনার সাথে সাথে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এখন দেখবেন নিন্মচাপ শুরু হওয়ার আগেই টিভি, রেডিও, আবহাওয়া অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক একটা ওয়াচ করতে থাকে এবং সচেতনতা তৈরি করতে থাকে। এই উদ্যোগটা সরকার করেছে, তাই জনসচেতনতার ফলে গত পাঁচ বছরে যেসব ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তাতে মানুষ বা সম্পদের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই। যতি আমরা আগের কথা চিন্তা করি, তাহলে এটা কোথা থেকে হয়েছে? আমাদের সচেতনতা থেকে। তো আমাদের পুঁজিবাজারে দুবার দুই রকম সমস্যা হয়েছে, এতে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, রেগুলেটরেরও অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং সচেতন হয়েছে রেগুলেটর, পুঁজিবাজার। তা ছাড়া সবাই এখন সতর্ক এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে এবং সেই সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী সরকারি প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবস্থার ফলে আমার মনে হয় না যে ওই ধরনের কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়বে। কারণ বিনিয়োগকারীরা সচেতন হয়েছেন, তারা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন যে কোথায় বিনিয়োগ করবেন।

একজন বলছেন, এ জন্য তিনি বিনিয়োগ করবেন সেটা নয়। মারজিন গ্রুপ নিয়ে যে সমস্যা ছিল, এখন সেটা নেই। বর্তমানে যারা মারজিন নিচ্ছে, তারাও সতর্ক এবং যারা নিচ্ছে তারাও আনেক বেশি সতর্ক। এ জন্য আমি মনে করি যে আজকে আমরা যে অবস্থানে আছি বা আমাদের রেগুলেশন যে অবস্থানে আছে, তার কথার প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের কথা চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। এটা বোকামি। আগামী দিনে যেভাবে আইনকানুন তৈরি হচ্ছে বা প্রয়োগ হচ্ছে, তাতে কওে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে বাজারে পণ্যের উত্থান-পতন দুটোই থাকবে। আমাদের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, যাঁরা ব্যক্তিগত বিনিয়োগ করেন, তাঁরা সব সময় ইনডেক্স নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন। যেদিন ধরেন ৩ আইটেমের দাম কমে গেছে, ওই দিন কিন্তু আবার অন্য ২০টা পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এখন ১০০ পয়েন্ট বাড়ায় আপনার কী উপকার হবে? পণ্যের দাম যদি কমে যায়, তাহলে ইনডেক্স কি আপনাকে প্রভাবিত করবে? না। আপনি বিনিয়োগ করার সময় চিন্তা করবেন যে কোন কোম্পানিটা ভালো ডিভিডেন্ট দিচ্ছে এবং লাভ আসে, আপনি সেই কোম্পানির সাথে বিনিয়েগ করবেন। আমার ব্যক্তিগত ফিলোসপি হচ্ছে, যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা ডিভিডেন্টটা পরে কিনবেন, রের্কড ডেটের পরে কিনবেন। যেহেতু আপনি বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন, তাঁরা তো ট্রেডার নন, তাঁরা তথ্য নিয়ে ট্রেডার কিনতে পারেন। যাঁরা অন্য কোনো পেশায় যুক্ত আছেন যেমন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী তাদের তো যথেষ্ট সময় নেই, তাঁরা যদি বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে যে কোম্পানি ডিভিডেন্ট ভালো দিচ্ছে, তাদের সাথে শেয়ার কিনতে পারেন। বছর শেষে হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, তাঁর ২০-২৫ শতাংশ লাভ হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা রাখলে তো বছরে তাকে ৫-৬ শতাংশ লাভ দেয়, কিন্তু বিনিয়োগ করে তিনি যদি ১৫ শতাংশও পান, সেটা তাঁর জন্য ভালো। এনালাইসিস করে দেখেন যে কোম্পানিগুলো রেকর্ড ডেটের, যা বাজেট ছিল তা থেকে বছর শেষে ১৫-২০ শতাংশ গ্রোথ হয়নি। এভাবে বছর শেষে ডিভিডেন্ট যদি ২০-৩০ শতাংশ পাওয়া যায়, তাহলে সেটা আপনার থেকে যাচ্ছে এবং ক্যাপিটালের দিক দিয়েও আপনার ১৫-২০ শতাংশ লাভ হচ্ছে। যদি আপনি ভালো কোম্পানিতে থাকেন, যাদের পূর্ব ইতিহাস আছে, ব্যবস্থাপনার কমিট ভালো। তা ছাড়া আপনি তো প্রতিদিন বাজারের দিকে তাকাবেন না, প্রতিদিন শেয়ারের দাম বাড়বে না, হয়তো একেক দিন একেক শেয়ারের দাম বাড়বে বা কমবে, তখন ইনবেস্ট কখনো বাড়বে, কখনো কমবে। কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা ইনডেক্স বা ট্রেডার নিয়ে চিন্তা করবেন না। তাঁদের উচিত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা, তাহলে তিনি ভালো প্রফিট পাবেন। দীঘমেয়াদি বলতে এক বছরের নিচে না। তিনি যদি ৬ বা ৯ মাসের মধ্যে একটা ভালো রিটার্ন পান তাহলে তিনি বের হয়ে যেতে পারবেন। এটা তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। ক্যাপিটাল মাকের্টের ভালো রিটার্ন বলতে আপনাদের মতো প্রফেশনাল ছাড়া কত পারসেন্টেজ বোঝায়? আমরা মনে করি, যেহেতু ক্যাপিটাল মার্কেটে তুলনামূলক রিস্কটা বেশি নিচ্ছি, সেহেতু আমার রিটার্নটা বেশি আসার কথা। আর ব্যাংকে এফডিআরে ৬-৭ শতাংশের বেশি আসে না। সে ক্ষেত্রে শেয়ার বিনিয়োগে যদি ১৫-২০ শতাংশ আসে, তাহলে সেটা ভালো রিটার্ন বলা চলে।

ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করার উপযুক্ত সময় বা কোথায় বিনিয়োগ করা উচিত
আমাদের অবস্থান থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট আইটেম নিয়ে কথা বলতে পারি না। আমরা বলছি পলিসির বিষয় নিয়ে। আমি আপনাকে প্রথমেই বলেছি, যে কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ট দেয়, সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। ভালো বলতে যে কোম্পানির ডিভিডেন্ট লিড বেশি হয়। ধরেন একটা কোম্পানির শেয়ারের দাম আছে ১ হাজার টাকা, সে লাভ দিয়েছে ১০ টাকা। আবার অন্য একটা কোম্পানির শেয়ার ডিভিডেন্ট আছে ২৫ টাকা, সে ২০ শতাংশ দিচ্ছে, আমি সেখানে যাব। আবার যদি এই কোম্পানির শেয়ার ২৭ শতাংশ হয়ে যায়, তাহলে ভালো। এ জন্য কোন কোম্পানির শেয়ার কিনবেন, কী দামে কিনবেন, এই বিষয়টা বিনিয়োগকারীকে বুঝতে হবে। নিজে যদি না বোঝেন, তাহলে কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারের মাধ্যমে এই কাজটা করতে পারবেন। সেখানে রিচার্জের লোক আছেন, ডিলাররা আছেন, তাঁদের সাথে কথা বলে বুঝে মতবিনিময় করে বিনিয়োগ করতে পারেন ।

মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি ও অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে ডিমান্ড ফুলফিল করার মতো স্কিপ্ট বা ইস্যু কমে বা কেন আসছে না

এ বিষয়ে আমার মতামত হচ্ছে, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে ডেট বাড়ানোর জন্য আরও ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার আসা উচিত। তাহলে বাজারে ডেট বাড়বে, দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়বে। ভালো স্কিমের অভাব আছে, কিন্তু স্কিম বাস্তবায়ন করার জন্য জাতীয় পদক্ষেপ দরকার, তবেই ইস্যু বাড়ানো সম্ভব। আমরা কাউকে যদি বলি, ভাই আপনি লিস্টেট সদস্য হন। তাহলে তিনি প্রশ্ন করেন, কেন লিস্টেড হব, লিস্টেড হলে আমাকে অনেক নিয়মকানুন মানতে হচ্ছে, আমার ট্যাক্স দিয়ে ডিভিডেন্ট নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমি ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ইন্টারেস্ট দিচ্ছি, সেই ইন্টারেস্ট তো আমার ট্যাক্স ফ্রি। যেহেতু কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই এ ব্যাপাওে, সে জন্য আমরা বাবল প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোর করে আনতে পারছি না।

লিস্টেট কেন হব, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন যে লিস্টেট হতে গেলে ট্যাক্স বেশি দিতে হচ্ছে, কিন্তু যখন কোনো কোম্পানি লিস্টেট হয়, তাকে বেশি ট্যাক্স দিতে হয়। তাদের উদ্যোক্তা এ ক্ষেত্রে আনার জন্য আপনাদের বা সরকারি কোনো উদ্যোগ কি আছে? কিছু প্রস্তাব তো প্রতি বছরই বাজেটের আগে দেওয়া হয় যে এসব প্রস্তাব বিবেচনায় নিলে এতে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে, কোম্পানিও লাভবান হবে। আমরা যে প্রস্তাবগুলো দিই, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে হয়তো চূড়ান্ত পর্যায় আসে না। আমরা বলছি, ১০ শতাংশ যেহেতু যথেষ্ট মনে করছে না, সেটাকে আর একটু বাড়িয়ে দেওয়া, কিন্তু সরকার বাড়িয়ে দিতে পারে নাই বা দেয় নাই। তাহলে এটাকে আমরা কি বলব যে এটা সরকারের বিবেচনাবোধের বা সদিচ্ছার অভাব? আমরা বিষয়টাকে সেভাবে দেখছি না। সরকারের সব ঠিক আছে, তারা মনে করে যে যদি ট্যক্স ছাড় দেয়, তাহলে সরকারের রেভিনিউ কমে যাবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা মনে করি যে ট্যাক্স কমে যাবে না, বাড়বে। চেক করলে দেখা যাবে, আজকে যে কোম্পানিটা লিস্টেট হয়েছে, সেই কোম্পানিটা যে ট্যাক্স দেয়, আর তিন বছর আগে ট্যাক্স দিত, তা থেকে এখন বেশি দিতে হবে। লিস্টেড হলে সরকার ট্যাক্স বেশি পায়। কারণ অনেক বেশি ট্রান্সফার দিতে হয়। যেহেতু প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা তেমন একটা নেই, এদের যদি লিস্টেড করা যায়, তাহলে তদারকি ব্যবস্থাটা অনেক স্ট্রং হয়। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ। যখন লিস্টেড হয়ে যায়, তখন অডিটর কিন্তু অনেক বেশি সর্তক হয়, প্রাইভেট লিমিটেড কিন্তু এতটা সতর্ক থাকে না।

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট ১ বাস্তবায়নের জন্য যে কাউন্সিল হয়ে গেছে, তার প্রভাব কীভাবে পড়বে?
কাউন্সিল গঠন করার আগে, আইন পাস হওয়ার আগেই অডিটরদের মধ্যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন চলে আসছে। তাঁদের সতর্কতা অনেক বেড়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে অডিট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমাদের যাঁরা অডিটর আছেন তাঁদের সাথে যখন কথা বলি, বোঝা যায় তাঁরা এ ব্যাপারে অনেক সতর্ক এবং তাঁদের দিক থেকে যে ধরনের প্রস্তুতির দরকার তাঁরা নিচ্ছেন। ফলে আগের চেয়ে মনিটরিং সিস্টেম এখন ভালো। ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে। তাঁদের জবাবদিহিতা আছে। এ জন্য তাঁরা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। আপনি একটা ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট দিলেই সে শাইন করবে না, সে তার মতো যাচাইবাছাই করেই শাইন করবে।

সরকারি, বেসরকারি, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে বাজারে না আনতে পারলে ডেট বাড়বে না বলে বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। এই কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার জন্য বা সরকারের যে লুফরেটিব ফ্যাসিলিটিজ দেওয়ার কথা, সেই সব দেওয়ার জন্য একটা উদ্যোক্তা বা টিম থাকতে হবে। সে রকম একটা কমিউনিকেশন টিম যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটি কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকার এদের মিলে উদ্যোগ হতে পারে এ রকম কোনো টিম আপনাদের আছে বা নিতে চান কি না? আসলে আমরা যে পর্য য়ে আছি, সেদিক থেকে এটার তেমন গুরুত্ব নেই। এট আসতে হবে সরকার বা রেগুলেটরের পক্ষ থেকে। আমাদের নতুন উদ্যোগ নিয়ে আসা, মার্কেটিং করা এটা আমাদের ব্যবসার পার্ট। সেটা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ইবারলেশন কমিটি এই ডেভেলপমেন্টটাকে কীভাবে বাড়ানো যায় এটা নিয়ে কাজ করবে, সেটা সরকারের পক্ষ থেকে হতে পারে। সেখানে সরকারি কমিটি কাজ করার ক্ষেত্রে যদি বেসরকারি বা আমাদের কোনো সহযোগিতা চান, সেটা অবশ্যই আমরা করব। কিন্তু আমাদের পক্ষ বা প্রস্তাব দিয়ে কোনো কমিটি গঠন করার মতো সুযোগ আমাদের নেই। আমরা মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন, আমাদের কথায় বা উদ্যোগে কাজ হবে না। এগুলো সরকারিী পর্যায়ে এলে আমরা সেখানে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারি, যদি সে রকম সিচুয়েশন হয়। আপনারা যদি ব্যক্তিগতভাবে পুঁজিবাজারের মার্কেট ডেট বাড়ানোর জন্য মার্কেটের ভালোর জন্য পলিসি বা অনেক উদ্যোগ রয়েছে, আমরা দেখেছি সেই রুলগুলো মার্কেটের জন্য অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এ রকম কোনো রুল কি আপনারা নিতে পারেন না? একটা কমিটি, পলিসি? আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ ফিল করছি যে এখানে কিছু উদ্যোগের অভাব রয়েছে। কেন আমাদের পুঁজিবাজারকে ভালো করার জন্য, ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চাইবে এই ভাবগুলো আমাদের সবার মাঝেই রয়েছে। এ রকম উদ্যোগ কারও না কারও নিতে হবে সরকারকে বার্গেডিং অ্যাসোসিয়েশনের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। পুঁজিবাজারের উদ্যোগ বাড়ানোর জন্য যেসব প্রাইভেট সেক্টরে কথা বলা যায় আমরা বলেছি, বলছি এবং বলব এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। এগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সরকারের যে এক্সকুসিভ সিদ্ধান্ত, সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা এগুলো সরকারের এক্সকুসিভ বিষয়। সেখানে আমাদের কোনো অবদান নেই, যেখানে সরকারের তালিকাগুলো শুধু আইসিবির মাধ্যমে হয়। বেসরকারি কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক সেখানে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেন না। আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। সরকারি নীতিনির্ধারণে ওই ধরনের কোনো পলিসি আমাদের হাতে নেই।

স্টক হোল্ডারদের জন্য বুলেট পয়েন্ট
আমি সব বিনিয়োগকারীকে বলব যে আমরা কোম্পানির মান ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করব। সারা বিশ্বেদেখা গেছে যে ব্যক্তি পর্যায়ের রিটেইল বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকে আর আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা ইকুইটি মার্কেটে বিনিয়োগ করে থাকে। ইকুইটি মার্কেটে বিনিয়োগ করলে কখনো অনেক বেশি লাভ আসতে পারে আবার না-ও আসতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে লসের সম্ভাবনা কম। কারণ মিউচুয়াল ফান্ডে একটা কোম্পানিতে লস হলে আরও চারটা কোম্পানিতে লাভ হয়। এ জন্য বছর শেষে একটা ডিভিডেন্ট দিতে পারে। ইন্ডিয়ার একটি বড় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাদের বক্তব্য হলো, তারা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে এবং ব্যাংকের বাজার অনেক বড়। এ জন্য তারা লাভবান হয় বেশি। আমরাও আশা করছি আমাদের এই পুঁজিবাজার সাউথ এশিয়ার মধ্যে একদিন অন্যতম পুঁজিবাজার হবে। আমাদের আইন নিয়ে যে ইনফর্মগুলো দরকার, সেগুলো অনেকটা হয়ে গেছে, কিছু হয়তো প্রক্রিয়াধীন। আমাদের দেশেও ৩-৪ হাজার টাকা ট্রানজেকশন হবে খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের দেশেও হবে এই বাজেট।

ছায়েদুর রহমান
প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড
পরিচালক, ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড।