স্টিফেন হকিং ও ‘মোটর নিউরন’

বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আর নেই। আজ বুধবার (১৪ মার্চ) তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। মাত্র ২১ বছর বয়সে স্টিফেন হকিংয়ের মোটর নিউরন রোগটি ধরা পড়লে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, তিনি আর মাত্র ২ বছর বাঁচবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে এ পদার্থবিজ্ঞানী কাল অবধি বেঁচে ছিলেন। আর এ আয়োজনে আমরা প্রাণঘাতী মোটর নিউরন ডিজিজ সম্পর্কে জানবো।

বিশ্বের অন্যতম দুর্বোধ্য এবং দুর্লভ ব্যাধি মোটর নিউরন ডিজিজ যা Lou Gehrig’s disease নামেও পরিচিত। মূলত, MND বা Motor neuron disease (মোটর নিউরন ডিজিজ) বা মোটর স্নায়ুর রোগ হল একটি নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার বা স্নায়ুবিক রোগ।

ডাক্তারি ভাষায় মোটর নিউরন হলো দেহের আজ্ঞাবাহী স্নায়ুর একক যা মাংসপেশীর ঐচ্ছিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন: হাঁটা-চলা, কথাবলা, খাদ্য গলঃধকরণ এবং দেহের সাধারণ নড়াচড়াসহ শরীরের অন্যান্য গতিবিধির ওপর প্রভাব বিস্তার করে বা ধ্বংস করে।

এ রোগে মস্তিষ্কের এবং স্পাইনালকর্ডের স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে স্নায়ুতে তথ্য আদান প্রদান কমে যায়। এর সম্মুখীন ব্যক্তি প্রতিবন্ধিতা এমন কি মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করতে পারেন। প্রকৃতিগত ভাবে মোটর নিউরন ডিজিজ্ সাধারণত প্রোগ্রেসিভ বা ক্রম বিকাশমান প্রকৃতির যাতে ক্রমশ: রোগের তীব্রতা বেড়ে আক্রান্ত দেহ জড়-বিবশ হয়ে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

বিদেশী চিকিৎসা বিষয়ক পত্র-পত্রিকার তথ্যমতে, যেকোনো সময় এ রোগ হতে পারে। তবে এই রোগের প্রসারণ এবং আঘাত হানার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে চল্লিশ বছর বয়সের পর। বিশেষভাবে পঞ্চাশ থেকে সত্তর বছর বয়সের মধ্যে।

এছাড়া, সৈনিক পেশায় (যেমন- সেনা, নৌ, বিমান) কর্মরত ব্যক্তিদের এবং পেশাদার ফুটবলারদের মধ্যেও এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে, পারিবারিক ইতিহাস জনিত কারণে, ভাইরাস, পরিবেশ, আবাসস্থল ইত্যাদি কারণেও এ রোগ হতে পারে। এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা আজ অবধি আবিষ্কৃত হয় নি এবং এখনো গবেষণা চলমান।

রোগটির কিছু লক্ষণ ও তার প্রতিকার নিম্নরূপঃ

# ব্যথা এবং অস্বস্তি: এটি সরাসরি MND’র কারণে নাও হতে পারে। এর পেছনে অন্য কোনো পরোক্ষ কারণ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারী পরামর্শে উপযুক্ত ব্যথা কমাবার ওষুধ খেতে হবে।

# পেশী ব্যথা: এক্ষেত্রে বিছানা বা চেয়ারে বসা বা শোয়ার অবস্থান পরিবর্তন করে উপশমের চেষ্টা করা যেতে পারে। তাতেও কাজ না হলে ডাক্তারী পরামর্শে পেশী শিথলীকরণ ওষুধ সেবন করতে হবে।

# শক্ত জয়েন্ট: এক্ষেত্রে মৃদু ব্যায়াম সাহায্য করতে পারে। তাই ফিজিওথেরাপিষ্টের কাছে উপযুক্ত ব্যায়ামের অনুশীলন গ্রহণ করতে হবে।

# অসংযম: এ ধরণের সমস্যা সাধারণত MND’র সাথে যুক্ত করা হয় না। তথাপি এরকম সমস্যা সমাধানে অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট এবং MND নার্সের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

# অন্ত্র সমস্যা: সরাসরি MND দ্বারা সাধারণত সৃষ্ট হয় না। তথাপি কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে সমস্যা সমাধানে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

# কাশি ও বিষম অনুভূতি: সংশ্লিষ্ট, খাদ্য গ্রহণ, কথা বলা ও যোগাযোগ সমস্যাঃ এ সমস্যার সমাধান স্পীচ এন্ড ল্যাক্সগুয়েজ থেরাপিষ্ট (এসএলটি) এর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।

# লালা ও শ্লৈষ্মিক: এ সমস্যা সমাধানে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।

# শ্বাসের সমস্যা: এক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রোগ নির্ণয়ের নানা পরীক্ষায় ও পরবর্তী সময়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারেন। এ দুঃসময়ে পরিবার থেকে রাষ্ট্র আমৃত্যু তার পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সবার। আর তখনই সম্ভব বিশ্বখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-এর মত মোটর নিউরন ডিজিজকে সাথী করে বিশ্বজয় করা।

আজকেরবাজার/এস