স্তনে চাকা হলেই তা ব্রেস্ট ক্যান্সার নয়

একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকরী করেন রাফিজা (ছদ্মনাম)। স্বামীও চাকরীজিবী। অফিস থেকে বাসায় যখন ফেরেন তখন ঘড়ির কাঁটা আটের ঘর পার হয়ে যায়। আর তাই তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার বানাতে হয়। সপ্তাহের ছয়দিনই অফিস থাকায় নিজেকে তেমন সময় দিতে পানে না। কিন্তু সেদিন হঠাৎ করেই তার কেন জানি মনে হল ডান স্তনের উপরের দিকে কি যেন চাকার মত হাতে অনুভব করছে।

ভালো করে বাম ন্তনও পরীক্ষা করল সে। কিন্তু কোথাও আর চাকার মত অনুভব হচ্ছে না। শুধুমাত্র ডান স্তনের উপরের অংশেই চাকা অনুভব হচ্ছে। আর চাকাটি বেশ বড়ও। এতদিন ধরে বুঝতে না পারায় নিজের উপরই রাগ হলো রাফিজার। সিদ্ধান্ত নিল কাল অফিস ছুটির পর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার।

মৌসুমী দে’র (ছদ্মনাম) বয়স এখন ৪৫। তিন সন্তানের মা মৌসুমী চাকরী করেন একটি এনজিওতে। থাকেন নারায়ণগঞ্জে। তারও হঠাৎ করেই রোগটি ধরা পড়ে। আর যখন জানতে পারেন যে তার ব্রেস্টে টিউমার তখন আর সময় ছিলনা। আবার দ্রুত যে চিকিৎসা করাবে তারও সামর্থ্য ছিলনা অল্প বেতনে চাকরী করা স্বামী রাহুলের।

গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, এমন অনেক মেয়ে আর মহিলা রয়েছেন যারা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবে চাকার মত অনুভব করলেই যে ক্যান্সার, তা কিন্তু নয়। কিন্তু আমাদের মত দেশের নারীদের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হচ্ছে লজ্জা। তারা লজ্জায় এসব রোগের কথা মুখ ফুটে কাউকে বলতে চায়না বা পারেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একেবারে শেষ অবস্থায় যখন রোগী একেবারে সহ্য করতে পারছেন না তখন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসা হয়। এমন ক্ষেত্রে ডাক্তারদেরও তেমন কিছু করার থাকে না।

তিনি বলেন, স্তনে চাকা দেখা দিলেই যে ব্রেস্ট ক্যান্সার তা কিন্তু নয়। তবে এজন্য দরকার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, এসব মূলত সাধারণ টিউমার বা সাধারণ কোন রোগ। আর তাই স্তনে চাকা দেখা দিলেই আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. নীরু বলেন, শরীরের অন্য স্থানের মতোই স্তনে অস্বাভাবিক কোষ বাড়ার কারণে কোনো চাকা হলে তাকে টিউমার বলে। শরীরের কোনো প্রয়োজন ছাড়াই অনিয়ন্ত্রিত কোষবিভাজন থেকে এর সৃষ্টি। দুই ধরনের হতে পারে এই টিউমার। বিনাইন টিউমার মূলত ক্ষতিকারক নয়। আর ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা ক্ষতিকারক। উৎপত্তিস্থলের সীমানা ছাড়িয়ে বাসা বাঁধতে পারে অন্য যেকোনো স্থানে, কাছে কিংবা দূরের অঙ্গে। এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই ক্যান্সার।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে এ বিষয়ে আগে সচেতনতার অভাব থাকলেও বর্তমান সরকার সচেতনতা তৈরিতে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নারীদের মধ্যে বর্তমানে যে সচেতনতাটুকু তৈরী হয়েছে তা এই আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই হয়েছে। সরকারের একাধিক প্রচারণার কারণে আজ শহর ছাড়িয়ে গ্রামের নারী-পুরুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী হচ্ছে।

আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানারা চৌধুরী বলেন, মূলত খুব অল্প বয়সে পিরিয়ড বা মাসিক হওয়া ও বেশি দেরিতে বন্ধ হলেও বাড়তি ঝুঁকি থাকে ব্রেস্ট ক্যান্সারের। আর এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা। মানুষকে আরো বেশী সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান