স্বীকৃতি আদায়ে এ মাসেই চিঠি যাচ্ছে জাতিসংঘে

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাত্রিতে ঢাকায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সে বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে এবারই প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে এই দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির

(আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস) জন্য চলতি মার্চ মাসেই জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক।

সচিবালয়ে পিআইডি ভবনের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

মোজাম্মেল হক জানান, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসাবে পালনের বিষয়টি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। দিবস হিসাবে পালনের জন্য এটাই যথেষ্ট। তারপরও রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার হিসাবে গত সোমবার (২০ মার্চ) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণহত্যা দিবস পালনের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গণহত্যা দিবস পালনের বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব নিয়ে চলতি মাসেই (মার্চ) জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়া হবে। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব নিয়ে এ মাসেই (মার্চ) জাতিসংঘকে চিঠি দেওয়া হবে। এজন্য আবেদন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। কবে এবং কাকে দিয়ে পাঠানো হবে তা ঠিক করা হচ্ছে। জাতিসংঘে এটা (প্রস্তাব) উঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের পেছনে ইতিহাস নেই

তিনি বলেন, আমরা যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস পালন করি এর পেছনে ইতিহাস রয়েছে। অনেকে সেদিন শহিদ হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করা হলেও এর পেছনে কোনো ইতিহাস নেই। দিবস পালন করতে হয় সে হিসেবেই তা পালন করা হয়। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে কেন গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, এর পেছনে সমস্ত তথ্য উপাত্ত, যুক্তি উপস্থাপনে ডকুমেন্টস তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে এসব তথ্য উপাত্ত বিভিন্ন দেশ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তাই এটা শেষ হলেই কেন ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, এর পেছনে যুক্তিগুলো তারা পুরোদমে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করবে।

২৫ মার্চ সারাদেশে নানা কর্মসূচি

মন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৫ মার্চ তারিখে ‘গণহত্যা দিবস’ প্রথমবাররে মত পালন করতে যাচ্ছে। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে এবার কাঙ্ক্ষিত ব্যাপক কর্মসূচিতে এ দিবস পালন করা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এ ঘটনা মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

এদিন ‘রক্তাক্ত ২৫ শে মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোক চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘এবার ২৫ শে মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা ৩০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে ‘রক্তাক্ত ২৫ শে মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোক চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া প্রতিটি জেলা, উপজেলায় ২৫ তারিখ এ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করতে যাচ্ছি।’

দূতাবাসগুলোতে কর্মসূচি নেই

দেশের বাইরে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে দিবসটি পালনের কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দুতাবাসগুলোতে আমরা এ বছর নির্দেশনা দেইনি। কারণ, সেখানে একটা সভা আয়োজন করতে হলে বিভিন্ন লোকদেরকে দাওয়াত করতে হয়। দাওয়াত করতে গেলে দূতাবাসের যে একটা নিয়ম আছে, সেই নিয়মটি পালন করতে নুনতম ৭ দিন লাগে। সেই সময়টা আমাদের এ বছর হাতে ছিলনা দেখে দূতাবাসগুলোতে আমরা বলিনি।’

তবে বিদেশে বাংলাদেশি দুতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে এ দিবসটি পালন করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘দেখি চেষ্টা করে, আমাদের দুতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে কিছু করা যায় কি না।’

তবে ভবিষ্যতে দুতাবাসগুলোতে অবশ্যই এ দিবস পালন করা হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

প্রথমবার তাই ছাড়

২৫ মার্চ কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বিশেষ গণহত্যা দিবস পালন না করলে কোনো পদক্ষেপ থাকবে কিনা সরকারের এমন প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হবে। এটা জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। এ দিবস যদি কেউ পালন না করে তাহলে তা আপনারা বা জনগণই এর বিচার করবে। এবার যেহেতু প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে। আর এ অল্প সময়ের মধ্যে হয়তো কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কর্মসূচি পালন সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ভষ্যিতে অন্যান্য জাতীয় দিবসের মতো গণহত্যা দিবসও পালন করবে আশাবাদী তিনি।

যে কারণে দেরিতে গণহত্যা দিবস

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এতো দেরিতে কেন এই উদ্যোগ? কেন আগে গণত্যা দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হলো না-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন। তারা এটার উদোগ নেইনি। বলতে পারেন আপনারা তো কয়েবার ক্ষমতায় তাহলে দেরি কেন। হ্যাঁ- আমরা আগে দুই বার এবং বর্তমানে ক্ষমতায় আছি। গতবার বঙ্গবন্ধু হত্যকাণ্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটি আমাদের সামনে ছিল। আমরা এটা সম্পন্ন করেছি। দেরিতে হলেও আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। না হওয়ার চেয়ে তো হওয়া ভাল তাই না?

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহমুদ রেজা খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, গত ১১ মার্চ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের উপর জাতীয় সংসদে উঠানো প্রস্তাবের উপর আলোচনা শেষে এ দিনই জাতীয়ভাবে তা পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।