হবিগঞ্জে বাড়ছে নদীর পানি; হুমকিতে ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কালনী, কুশিয়ারা ও ভেড়ামোহনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ ফুট বেড়েছে। সেখানে এখন বিপদসীমার ১৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এক ফুট পানি বাড়লেই তলিয়ে যাবে বাঁধ। আর নষ্ট হবে কৈয়ার ঢালা প্রকল্পের ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হবে আশপাশের হাওর।

টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, হাওরের ফসল রক্ষায় দিন-রাত কাজ করছেন কৃষকরা।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বানিয়াচং উপজেলায় ৬৯০ হেক্টর, লাখাই উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর, আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৫৬০ হেক্টর, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর ও নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৭৪ হেক্টর জমি।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে করে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। লাখাই উপজেলার হাওরগুলোতে পানি এসেছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে এবং আজমিরীগঞ্জের কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে মাহতাবপুর এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম জানান, হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও বর্তমানে তা কমে গেছে। তবে আজমিরীগঞ্জের কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়দের নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ রক্ষা না করা হলে কৈয়ার ঢালা প্রকল্পের ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হবে।

বানিয়াচং উপজেলার নোয়াগড় গ্রামের কৃষক শাহ জাহান মেম্বার জানান, দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না হওয়ায় পলি পড়ে তা ভরে গেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাওর হুমকিতে পড়ে যায়। এছাড়া বেড়িবাঁধ না থাকায় ফসল রক্ষার বিষয়ে সন্দেহ হচ্ছে।

কৃষক রেনু মিয়া জানান, ফসল আমাদের একমাত্র অবলম্বন। যদি ফসল রক্ষা করা না গেলে সারা বছর চলা কঠিন হবে।

জানা যায়, নলাইর হাওর ও মাকালকান্দি হাওরের ফসল রক্ষার জন্য স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁধ দিচ্ছেন স্থানীয়রা।

নোয়াগড় হাওর এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম জানান, ইতোমধ্যে বেশ কিছু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন সেগুলো কেটে গরুকে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।

গফুর মিয়া জানান, বৃষ্টি আসার আগে বাঁধ নির্মাণ করা হলে জমির ফসল রক্ষা করা সম্ভব হতো।

কৃষক সবুজ মিয়া জানান, ৯ একর জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু সর্বনাশা বন্যার পানি সব আনন্দ বিষাদে পরিণত করে দিয়েছে।