হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন আজ

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর)। ৬১তম জন্মদিনে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত লিখে যেতে চাই। লেখালেখিই আমার বিশ্রাম। লেখালেখি বন্ধ হলে আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে পড়বে, আমি বাঁচতে পারবো না।

পাঠকদের উদ্দেশে তার আবেদন ‘দোয়া করবেন, আমি যেন আমৃত্যু লিখে যেতে পারি।’ তার সেই আশা পূরণ হয়েছিল। নিউইয়র্কে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি ‘দেয়াল’ উপন্যাস লিখেছেন। হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে আজ সারাদিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। টিভিতে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

সোমবার (১২ নভেম্বর) রাত ১২টা এক মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের বাসা দখিন হাওয়ায় কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন পরিবারের সদস্যরা।

নুহাশপল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল ইত্তেফাককে জানান, হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশপল্লীর পক্ষ থেকে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল রাতেই স্যারের কবর আর নুহাশ পল্লীতে মোমবাতি জ্বালানো হয়েছে। আজ সকালে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নূহাশপল্লীতে কবর জিয়ারত করবেন।

‘এদিকে, পাবলিক লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে আজ বিকালে শুরু হবে সপ্তাহব্যাপী হুমায়ূন আহমেদ বইমেলা। জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করেছে হুমায়ূনকে নিয়ে সেমিনারের। এছাড়া, চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সপ্তমবারের মতো হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ‘হুমায়ূন মেলা’। সকাল ১১টায় হিমুপ্রেমিরা হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে হলুদ বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করবেন। উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন অঙ্গনে তার ভক্ত ও বিশিষ্টজনরা। তার স্মরণে স্মৃতিকথা বলবেন অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা। নৃত্য পরিবেশন করবে চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে ও অন্য নৃত্যশিল্পীরা। মেলার স্টলগুলোতে থাকবে হুমায়ূন আহমেদের বই, তার নির্মিত চলচ্চিত্র ও নাটকের ভিডিও সিডি। মেলা সরাসরি সমপ্রচার করবে চ্যানেল আই ও রেডিও ভুমি।

১৯৪৮ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, গৌরিপুর জংশন, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচীনি দ্বীপ, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি।

তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আগুনের পরশমনি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবন মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও নয় নম্বর বিপদ সংকেত। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ও জয় করেছে দর্শক ও সমালোচকদের মন।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদিও স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন। দেশের বাইরেও তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। তার প্রমাণ জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছে পনের মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেস্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিত্সার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।