১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ

বারবার সর্তক করার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু না করায় ১২ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ব্যাচে শিক্ষার্থী বন্ধ করে দেয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

একই সাথে নতুন কোন বিভাগ ও বিষয় খোলা এবং সমাবর্তন পালনেরও অনুমতি পাবেনা এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসা আর্থিক অনুদানসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধাও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এই ১২ টিসহ ৩২ টি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে জানানো হয়, শিগগিরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকি ৩২টির মধ্যে ১২টি ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ওইসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। তারা (কর্তৃপক্ষ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও আইনের বিধান কেন প্রতিপালন করেনি।

নাম না প্রকাশের শর্তে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, হুট করে সরকার এদের বিরুদ্ধে এ্যকশনে যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পূর্ণাঙ্গভাবে রূপ পেতে হলে অনেকগুলো ক্ষেত্র রয়েছে, নিয়ম না মানলে পর্যায়ক্রমে ওইসব সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হবে।

নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা হবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে : ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-ইউডা, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।

এ ছাড়াও রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করলেও সম্প্রতি তারা তেজগাঁওয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছে কিন্তু সরকারের নির্দেশনা মানেনি-এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধের ব্যাপারে নাম প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৪টি একাডেমিক প্রোগ্রামের মধ্যে ১৪টি নিয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসে সিফট করতে বলা হলেও তারা সরকারের নির্দেশনা অমান্য করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাপারেও ভর্তি বন্ধের প্রস্তাব করেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে চার সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে প্রতিদিন দিতে গত জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। পরে আরও কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনকে। অন্য সদস্যরা হলেন-ইউজিসির সদস্য এম শাহ নেওয়াজ আলী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আব্দুল আল হাসান চৌধুরী। সদস্য সচিব করা হয় ইউজিসির উপ-পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভীনকে। কমিটি চার দফায় সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয় মন্ত্রণালয়ে।

এরপর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। এরপর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে ফের বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে ১২টিতে ভর্তি বন্ধসহ ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ দেয়ার সিন্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানানো হয়, মোট ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে।

আলটিমেটাম অনুযায়ী, ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র সাতটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেছে। বাকিগুলোর কোনোটি জমি কিনেছে, কোনোটি আংশিক কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় মার্কেট দখল করে এবং ডজনখানেক ভাড়াবাড়িতে কার্যক্রম চালানো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ্য করে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার দাবি করলেও বেশিরভাগ কার্যক্রম ভাড়া বাড়িতেই চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম চালানোর কথা বলে অনুমতি নিয়ে তা ভাড়া বাড়িতে চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে পাঠদানের স্বীকৃতি বাতিলসহ ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক একর এবং এর বাইরে দুই একর নিজস্ব জমি থাকতে হবে। জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন লাখ ৪২ হাজার ৮৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

আহছানউল্লাহ ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী সনদ রয়েছে। শর্তসাপেক্ষে সিটি ইউনিভার্সিটিও স্থায়ী সদন নিয়েছে। বাকিগুলো অস্থায়ী সনদ নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছে। সাময়িক সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালনার ইচ্ছা নেই।
তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার পর সাত বছর পার হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেয়া আলটিমেটাম গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। এর আগে ২০১০ সালে প্রথম আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এরপর ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালেও আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল।