১৫৪ ট্যানারিকে ক্ষতিপূরণের ৩১ কোটি টাকা জমার নির্দেশ

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হাজারীবাগের ১৫৪ টি ট্যানারি মালিককে ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া পড়া প্রায় ৩১ কোটি টাকা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে আদালত অবমাননার এক আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরে তিনি বলেন, ‘হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে নির্ধারিত সময়ে স্থানান্তর না করায় ১৫৪ ট্যানারি মালিককে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছিলেন। গত জুলাই মাসে সেই রায়ের পর আগস্ট পর্যন্ত ট্যানারি মালিকরা অর্থ প্রদান করে। কিন্তু পরে আর ঠিকমতো অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে আমরা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ব্যর্থতার কারণে গত ২৫ জানুয়ারি শিল্প সচিবকে তলব করেছিলেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। তলবের প্রেক্ষিতে তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাজির হলে আদালত তাকে কোম্পানিগুলোর বকেয়া অর্থ বকেয়া থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ও এর পরিমাণ জমা দিতে বলেছিলেন।

বুধবার (১ মার্চ) শিল্প সচিব আদালতে একটি প্রতিবেদন জমা দেন। যাতে দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে রয়েছে। আদালত আজ বৃহস্পতিবার বকেয়া অর্থ দুই সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে বলেছেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আদালত সতর্ক করে দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারের হেমায়েতপুরে নিতে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় গত বছর ১৮ জুলাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ। শিল্প সচিবকে এই অর্থ আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। গত ১০ জানুয়ারি শিল্প সচিব আরেকটি প্রতিবেদন তারা দাখিল করেছিলেন, যেখানে দেখা যায় গত আগস্ট মাসে ১৫০টি কোম্পানি ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে মাত্র চারটি ও অক্টোবরে তিনটি কোম্পানি টাকা দিয়েছে। তাই এই আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়।

এর আগে গত ১৬ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ট্যানারি মালিকদের পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রদানের নির্দেশ দেন।

পরে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩ জুন হাইকোর্টের আদেশ ১৭ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

পরে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের জরিমানার সিদ্ধান্ত ঠিক রেখে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা করে ধার্য করে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

সুত্র: দ্য রিপোর্ট