২১তম এফএ কাপে ফাইনালে উঠলো আর্সেনাল অবামেয়াংয়ের জোড়া গোলের রেকর্ডে

পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াংয়ের দুই গোলে গতকাল ম্যানচেস্টার সিটিকে হতবাক করে ২-০ গোলের জয়ের মাধ্যমে রেকর্ড ২১তম এফএ কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্সেনাল। ম্যাচ শেষে দলের ভূয়শী প্রশংসা করেছেন আর্সেনাল বস মিকেল আর্তেতা।

গানার্স বস আর্তেতা তার প্রতিপক্ষ সিটি বস পেপ গার্দিওলাকে কাউন্টার এ্যাটাক স্কিম দিয়ে পরাস্ত করেছেন। এই কাউন্টার এ্যাটাকর পরিকল্পনা নিখুঁত ভাবে কাজে লাগিয়ে দুই অর্ধে আর্সেনালের পক্ষে দুটি গোল করেন অবামেয়াং। ছয় বছর আগে এই এফএ কাপের শিরোপা জয়ে আর্সেনালের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আর্তেতা। উত্তর লন্ডনের ক্লাবটিতে প্রথমবারের মত দায়িত্ব নিয়ে এই স্প্যানিয়ার্ড ২০১৭ সালে পরাজিত হবার পর আবারো ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন।

আর্তেতা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা দারুন। আমরা যা করার চেষ্টা করি সেটা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করি। এই জয়টা সবদিক থেকেই আমাদের প্রাপ্য ছিল। সিটির মত সেরা একটি দলকে পরাজিত করতে হলে নিজেদেওর সুযোগগুলো শতভাগ কাজে লাগাতে হবে। আর এজন্য যেকোন পরিকল্পনাই সঠিকভাবে করতে হবে। আমি সত্যিই দারুন খুশী ও খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত। কিন্তু সবচেয়ে দু:খের বিষয় হচ্ছে আমরা এই মুহূর্তটা সমর্থকদের নিয়ে উদযাপন করতে পারছি না।’

মাত্র দুইদিন আগে চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে প্রিমিয়ার লিগে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে আর্সেনাল। আর এফএ কাপের এই জয়ের পর কিছুটা হলেও আর্সেন ওয়েঙ্গারের অধীনে আর্সেনালের স্বর্ণালী যুগ যেন আর্তেতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। সিটির সাথে এর আগে সাতটি মোকাবেলার প্রতিটিতেই পরাজিত হয়েছিল আর্সেনাল। এর মধ্যে করোনাভাইরাস পরবর্তী মাঠে ফিরেই প্রথম ম্যাচে ৩-০ গোলে পরাজিত হবার ম্যাচটিও রয়েছে। কিন্তু গানার্সদের এই পুর্নজাগরনে আর্তেতাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। শেষ ১০টি ওয়েম্বলি সফরে এই প্রথম গার্দিওলার দল পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল।

আর্তেতা বলেছেন, ‘ ইউরোপের সেরা দুটি দলকে পরপর দুই ম্যাচে পরাজিত করে আমরা দারুন একটি সপ্তাহ কাটিয়েছি। এই ধরনের ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না। কে খেলেছে তা নিয়ে আমি ভাবি না। আমি প্রতিটি খেলোয়াড়কেই বিশ্বাস করি। যে কারনে প্রতিদিনই দলে পরিবর্তন আসে এবং এজন্য সবাই প্রস্তুত থাকে। অনেক কষ্টের পর আমরা এই অবস্থানে এসেছি। এখন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য।’

এর আগে ঘরোয়া ২২টি ম্যাচেই সিটি অপরাজিত ছিল। কাল তারা নিজেদের শতভাগ দিতে পারেনি, আর এর পিছনে গার্দিওলা কোন যুক্তিও দিতে চাচ্ছেন না, ‘আমরা মোটেই ভাল খেলিনি। শুধুমাত্র যে ম্যাচে হেরেছি তা নয়, এটা হতেই পারে। কিন্তু দু:খ হচ্ছে দ্বিতীয়ার্ধে যা খেলেছি তার কিছুই প্রথমার্ধে খেলতে পারিনি। আমাদের শুরুটাই ভাল হয়নি এবং সে কারনেই পিছিয়ে গেছি। পুরো ম্যাচেই প্রস্তুতির অভাব চোখে পড়েছে। আমি জানি তারা পিছনে পাঁচজনকে খেলিয়েছে এবং আক্রমনেও তারা দারুন সচল ছিল। তারা নিজেদের দারুনভাবে রক্ষা করেছে। এটা সাধারণত লিভারপুলের বিপক্ষে দেখা যায়। কিন্তু আমরা সেটা বুঝে খেলতে পারিনি।

প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত হওয়া সিটির এখন আগামী মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায় থাকতে হবে। শেষ ১৬’র প্রথম লেগে তারা রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছিল। গার্দিওলা বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনো দুই সপ্তাহ সময় রয়েছে। মাদ্রিদের ম্যাচের এক সপ্তাহ আগে আমরা এফএ কাপের ফাইনাল খেলতে চেয়েছিলাম। এতে করে ছন্দে থাকা যেত। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ নষ্ট করেছি।’

গার্দিওলার সহকারী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আর্তেতা সিটি বসকে বেশ ভালভাবেই জানেন। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে সিটিজেনদের দূর্বলতার সুযোগটি তাই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিলেন আর্তেতা। সিটির এ্যাটাকিং ফুল-ব্যাক কাইল ওয়াকার ও বেঞ্জামিন মেন্ডির সাথে তাই অবামেয়াং ও নিকোলাস পেপেকে লাগিয়ে রেখেিেছলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯ মিনিটে ১৮টি পাস থেকে পেপের ডিপ ক্রসে অবামেয়াং দারুন ফিনিশিংয়ে আর্সেনালকে এগিয়ে দেন। গ্যাবনিজ স্ট্রাইাকারের এটি মৌসুমের ২৪তম গোল। আরো একবার তিনি প্রমান করলেন আর্সেনাল কেন তার সাথে চুক্তি নবায়ন করতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছে। ৭১ মিনিটে আরেকটি কাউন্টার এ্যাটাক থেকে সিটির অফসাইড ট্র্যাপ ফাঁকি দিয়ে অবামেয়াং ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি গানার্সদের জয় নিশ্চিত করেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান