৪২ দেশের ৪৫৯ এমপির মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিগত ২০১৬ সালে বিশ্বের ৪২টি দেশের ৪৫৯ জন সংসদ সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) মানবাধিকার সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। তাদের মধ্যে ৩৩৬ জন বিরোধী দলের এমপি, ১১২ জন সরকারি দলের এমপি এবং ১১ জন রয়েছেন স্বতন্ত্র এমপি রয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মিডিয়া সেন্টারে বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে এসব তথ্য তুলে ধরেন আইপিইউ’র মানবাধিকার সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও আফগানিস্তানের এমপি ফৌজিয়া কুফি। এ সময় বাংলাদেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও কিবরিয়া হত্যামামলার বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আইপিইউ এ মামলা দুটির বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখা চেয়েছে বলে জানান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগুং জানান, বাংলাদেশে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ্ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। ২০০৫ সালে কিবরিয়া হত্যা হলেও তার বিচারকার্য দীর্ঘায়িত হওয়ায় আইপিইউ-এর চলমান সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা বিষয়টিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। এ দুটি বিষয়ের দ্রুত বিচার ওদোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কেন বিচার দীর্ঘায়িত হচ্ছে তার ব্যাখাও চাওয়া হয়েছে।গত ১ এপ্রিল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া আইপিইউ-এর ১৩৬তম সম্মেলনে উত্থাপন করেন।

আইপিইউ এর হিউম্যান রাইটস কমিটির প্রেসিডেন্ট আফগানিস্তানের এমপি ফৌজিয়া কুফি বলেন, ২০১৬ সালে আইপিইউ ভুক্ত ১৭৩টি দেশের মধ্যে ৪২টি দেশের ৪৫৯ জন এমপির হয়রানির (মানবাধিকার লঙ্ঘন) অভিযোগ নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৩৬তম সম্মেলনেআলোচনা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকার বা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দ্বারা বিরোধীদলীয় এমপিরা বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হয়রানির অভিযোগ পাওয়া ৪৫৯ এমপির মধ্যে ৩৩৬ জন বিরোধী দলের, ১১২ জন সরকারি দলের এবং ১১ জন রয়েছেন স্বতন্ত্র এমপি। এদের মধ্যে আমেরিকা মহাদেশের ১৫৫ জন, এশিয়ায় ১১০ জন, আফ্রিকায় ৮৯ জন, ইউরোপ মহাদেশে ৬৩ জন, মিডিলইস্ট ও উত্তর আফ্রিকায় ৩৯ জন এবং ৩ জন এমপি রয়েছেন দক্ষিণ প্যাসিফিকের।

তিনি জানান, এরা সকলেই প্রায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এদের অনেককে অন্যায়ভাবে সংসদ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কারো কারো গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়েছে, অনেক এমপিদের স্বাধীনভাবে মতামত দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অন্যায়ভাবে সাসপেনশন, গণতন্ত্রহীন পার্লামেন্ট,বাকস্বাধীনতা হরণ এবং সরোপরি জীবননাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে তাদের।

আইপিইউ’র মানবাধিকার সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বাংলাদেশের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, এটা বেশ উদ্বেগের বিষয় যে বিশ্বের একটা বিপুল সংখ্যক সংসদ সদস্য নানাভাবে সরকার বাক্ষমতাসীন দলের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমরা এসব বিষয়েকম্বোডিয়া,মালয়েশিয়া, ভেনিজুয়েলা, মিলিশিয়া, তুর্কিসহ বেশ কয়েকটি দেশে সরেজমিন গিয়েছি। এবং সেখানকার সরকারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনাএবং হয়রানির শিকার এমপিদের সঙ্গেও কথা বলেছি।

তুরস্কে এমপিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন সবচেয়ে বেশি

আইপিইউ-এর মানবাধিকার সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা যায়, এমপিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি এসেছে তুরষ্ক থেকে। দেশটিতে ৬০জন এমপির মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। তুরস্কের সরকার সন্ত্রাস, ফৌজধারী অপরাধ-সহ নানা বিষয়ে ৬০জন এমপির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে। এদের মধ্যে ৫৫জন তুরস্কের বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য। সেখানে সংসদ সদস্যদের সংসদীয় দায় মুক্তির বিষয়টিও এক্ষেত্রে সরকার বিবেচনায় নেয়নি। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও বিবৃতিকে এমপিদের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এরমাধ্যমে এমপিদের আইনগত অধিকার, বাক-স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। একইভাবে নিকারাগুয়ার ২১ এমপির বিরুদ্ধে, মালয়েশিয়ায় ১৯ এমপির বিরুদ্ধে, মিয়ানমার ও জিম্বাবুয়ের ১৪ এমপির বিরুদ্ধে, শ্রীলঙ্কার ৫জনসহ ইরাক, কুয়েত, ইয়েমেন, বাহরাইন, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডির এমপির বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব বিষয়ে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করা হয়েছে।