চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের এখন আর অক্সিজেন সংকট নেই

তীব্র শ্বাসকষ্টের মতো কঠিন উপসর্গে ভুগতে থাকা চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের এখন আর অক্সিজেন সংকটে পড়তে হবেনা। জরুরি মুহূর্তে রোগীদের প্রয়োজন মেটাতে চট্টগ্রাম শহরের সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হাসপাতালগুলোতে এ মুহূর্তে প্রায় দেড়শ’ হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে।
চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক-দেড় মাস আগেও করোনা রোগীদের সংকটজনক মুহূর্তে কোনো হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন ফ্লো দেয়া যায়নি। এ কারণে বেশকিছু রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও ছিল তাদের স্বজনদের। কিন্তু মুমূর্ষু করোনা রোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার এ সংকট খুব কম সময়ের মধ্যে নিরসন করা সম্ভব হয়েছে।
বৈশ্বিক বিপর্যয় করোনা মহামারি মোকাবেলায় চট্টগ্রামকে দ্রুত তৈরি কওে তুলতে সরকারের সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন এ অঞ্চলের বিভিন্ন শিল্প পরিবারের কর্ণধারেরা। করোনা সমন্বয় কমিটি দফায়-দফায় সভা করে চট্টগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ পাঠিয়েছে। এসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে সমন্বয় কমিটি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে দিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সম্মতি আদায় করিয়ে এনেছে। এ কারণে চট্টগ্রামে সমন্বয় কমিটির প্রায় প্রতিটি সভায় ড. হাছান মাহমুদকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হতো যাতে করে এসব ঘাটতি তাঁর সহজে নজরে আসে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালের নেতৃত্বাধীন কমিটির পক্ষে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে সমন্বয়কের অনানুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রামের অপর দুইমন্ত্রী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও করোনা সংকট কালে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন করোনা কালের শুরু থেকে সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তাঁরা চট্টগ্রামের শিল্পপতিদের সহযোগিতা আদায় করেছেন।
সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ এবং চট্টগ্রামের প্রশাসনের সাথে কাঁধ মিলিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফী মো. মিজানুর রহমান, সাইফ পাওয়ার টেকের তরফদার রুহুল আমিন, মোস্তফা হাকিম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের কর্ণধার সাবেক মেয়র আলহাজ মনজুর আলম মঞ্জু, জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, টিকে গ্রুপের আবুল কালাম, সী-কম গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিরুল হক এবং বিএসআরএম ও কেডিএস গ্রুপ।
জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রায় দেড়শ হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার অধিকাংশই চট্টগ্রামের বিত্তশালীদের সৌজন্যে বিভিন্ন হাসপাতালে এসেছে। এরমধ্যে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০, মা ও শিশুহাসপাতালে ৪০ এবং জেনারেলহাসপাতালে ২০ এবং চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ১৪টি ক্যানোলা রয়েছে। এছাড়া, প্রাইভেট হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলোর মধ্যে ডেল্টায় ২টি, পার্কভিউ হাসপাতালে ৪, সিএসসিআরে ২, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ৩, ম্যাক্স হাসপাতালে ৪, মেডিকেল সেন্টারে ৩, ন্যাশনাল হাসপাতালে ২, রয়েল হাসপাতালে ২, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৪ এবং ইউএসটিসিতে ৪ এবং হালি শহরস্থ করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ২টি ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। অথচ গত মে মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত পুরো চট্টগ্রামে মাত্র ১টি ন্যাজাল ক্যানোলা ছিল চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে। নগরীর বাইরে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে´ও মেনি ফোল্ড অক্সিজেন ডেলিভারি সিস্টেমের আওতায় এসেছে।
এর মধ্যে গত ২৫ জুলাই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে জেনারেল হাসপাতালে। প্রায় ৮০ লাখ টাকার সরকারি অর্থায়নে এই প্লান্ট স্থাপিত হয়। প্লান্টের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনও স্থাপন করা হয়েছে হাসপাতালে। এস আলম গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়।
১৩ হাজার লিটার তরল অক্সিজেন ধারণ-ক্ষমতা সম্বলিত প্লান্টটি একবার পূর্ণ করলে স্বাভাবিক সময়ে ২-৩ সপ্তাহ নিরবিচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যুক্ত করা হয়েছে ভেন্টিলেটরসহ ১০ শয্যার আইসিইউ। গত ২২ জুন স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়। এর একদিন পর হালিশহর প্রিন্স অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপিত চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টারে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট সংযোজন করাহয়। এখানে ও ন্যাজাল ক্যানোলার মাধ্যমে তীব্র উপসর্গের করোনা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা যাবে।
খুব কম সময়ের মধ্যে করোনা সংকট মোকাবেলার সরঞ্জামে চট্টগ্রামের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও করোনা মনিটরিং সেলের বিভাগীয় সমন্বয় কর্তা আ ম মমিন হাফিজুর রহমান বাসসকে বলেন,“তথ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী, মেয়রসহ চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ, বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রয়াসে চট্টগ্রাম খুব কম সময়ে করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুও হার কমে এসেছে। ঈদুল আজহার পর ২ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়টুকু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে সংক্রমণের হার ঠেকিয়ে রাখতে পারলে আশাকরি এ যাত্রায় করোনা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো আমরা।”
চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়া বাসসকে বলেন, ‘আমার এখানে ১৪টি ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। কিন্তু এখনএসব ক্যানোলা ব্যবহার করার মতো রোগী নেই। তিনি বলেন, করোনা বাংলাদেশে শিগগির অন্য ১০টি রোগের মতো হয়ে যাবে। মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসবেন। কেউ আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেবেন।’