অস্থির যশোরের পেঁয়াজের বাজার

সীমান্তবর্তী জেলা যশোরের পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

গত দুই দিনের ব্যবধানে বাজারে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। এক মাস আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা। আর ঈদুল আজহা উপলক্ষে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা।

বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ আছে তাতে আগামী এক মাসেও কোনো সংকট না হওয়ার কথা নয়।

তবে, অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় রপ্তানিতে লাগাম টানতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে আবারও ন্যূনতম দাম ঠিক করে দিয়ে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা বলেছে, এখন থেকে প্রতি মেট্রিকটন পেঁয়াজ ৮৫০ ডলারের কমে রপ্তানি করা যাবে না। ভারতে এ রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার পরই দেশের পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে গেছে।

বেনাপোলের বড় বাজারের মিম বাণিজ্য ভান্ডারের আড়তদার মুসলিম উদ্দিন জানান, ‘ভারত তাদের পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধি করার কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আমরা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে পেঁয়াজ এনে পাইকারি বিক্রি করি। যে দামে কিনি তার থেকে সামান্য লাভে বিক্রি করি।’

খুচরা ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী জানান, ‘রবিবার পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। যা আগে ছিল ৪৫ টাকা। আর সোমবার বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকা দরে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকা করে। নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত এ দাম ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে।’

বেনাপোলের আড়তদার আলাউদ্দিন জানান, ভারত যেভাবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে দাম বাড়িয়েছে তাতে করে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ না আনা হলে দাম প্রায় ১০০ টাকা হবে।

যশোর বড় বাজার সূত্রে জানা গেছে, আলুপট্টি ও কালীবাড়িতে ১৩টি পেঁয়াজের আড়ৎ রয়েছে। এসব আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ বস্তা করে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রেতারা আড়ৎ থেকে এসব পেঁয়াজ কিনে থাকেন। যশোরে দেশি পেঁয়াজ আসে ঝিনাইদহ, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন মোকাম থেকে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ আসে বেনাপোল ও ভোমরা বন্দর দিয়ে। এছাড়া কোনো কোনো ব্যবসায়ী অন্যান্য মোকাম থেকেও পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন।

এদিকে, বাংলাদেশের আমদানিকারকরা বলছেন, গত সপ্তাহেও তারা প্রতি টন ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে আমদানি করেছেন। এখন ভারত ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেধে দেয়ায় তা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হবে।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক আবু হাসান বলেন, ’সর্বশেষ ২৫০ ডলার দরে ভারত থেকে পেঁয়াজ এনেছি। ভারত যে ন্যূনতম দাম ঠিক করে দিয়েছে, তাতে খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

বন্দর সূত্র জানায়, রবিবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয় ভারত থেকে। সোমবার ১৭০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের মতো। তাতে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন। স্বল্প দূরত্ব আর সহজলভ্যতার কারণে আমদানির বেশিরভাগটা ভারত থেকেই হয়।

আজকের বজার/লুৎফর রহমান