ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধার সার্কুলারে একমাসের স্থিতাবস্থা জারি

ঋণখেলাপিদের ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের ওপর একমাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত এই স্থিতাবস্থা জারি থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সার্কুলারকে চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী মনজিল মোরসেদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এ আদেশের ফলে, আগামী ২৪ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সার্কুলার কার্যকর হবে না। ফলে ঋণখেলাপিরাও এই সময় পর্যন্ত ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগটি নিতে পারবেন না।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান।

পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ঋণখেলাপিদের নতুন করে সুযোগ দিতে ২ শতাংশ সুদ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা রেখে সার্কুলার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়টি আমরা ১৬ মে বিকেলে আদালতকে অবহিত করি। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী জানান, এ সংক্রান্ত কোনো সার্কুলার দেওয়া হয়নি। পরে ওই দিন (১৬ মে) বিকেলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সার্কুলারটি প্রকাশ করা হয়। পরে আমরা ওই সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছি।

মনজিল মোরসেদ জানান, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপিরা ঋণের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। এতে করে সিআইবিতে তাদের নাম থাকবে না। তখন নতুন করে আবার হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সুযেগ তৈরি হবে। এতে ব্যাংকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এ কারণেই আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত যেন সার্কুলারের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। আদালত সার্কুলারের কার্যক্রমের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা দিয়েছেন।

এই আইনজীবী জানান, শুনানিতে আদালত বলেন, ঋণখেলাপিদের জন্য কাজ করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উঠে পড়ে লেগেছে। ঋণ নিয়ে ব্যাংকের টাকা পাচার করে দিয়েছে— এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই বলেও আদালত উল্লেখ করেছেন।

এর আগে, ২০ বছর ধরে এক কোটি টাকার বেশি ঋণধারী খেলাপিদের তালিকা, ঋণের পরিমাণ ও সুদ মওকুফের তালিকা চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা না জমা দেওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল ক্ষোভ জানান হাইকোর্ট।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। একইসঙ্গে রুলও জারি করেছিলেন। আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সিটি ব্যাংকের সাবেক সিইও মামুন রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা ওই রুলে জানতে চাওয়া হয়।

রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দুই সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

আজকের বাজার/এমএইচ