ওয়াসার ৩৪ পয়েন্টে পানি পরীক্ষার নির্দেশ

পানির চারটি স্তরসহ ৩৪টি পয়েন্টে রাজধানীর ওয়াসার পানি পরীক্ষা করতে মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

পানি পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটিকে ২ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছে, আইসিডিডিআরবি, বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসোলেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে ওয়াসার পানির ওই নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। প্রতিটি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার টাকা খরচ ধরে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ওয়াসাকে দিতে বলা হয়েছে। আর স্থানীয় সরকার সচিবকে বলা হয়েছে ওয়াসার কাছ থেকে এ টাকা আদায় করে দিতে।

আদেশে আদালত চারটি উৎস (বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, ভূ-গর্ভস্থ ও ভূমিস্থ), ১০টি বিতরণ জোন (যা মডস জোন নামে পরিচিত) এবং গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে বলেছে।

কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের মতামত শুনে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের ৫৯ এলাকার পানিতে ময়লা পানির প্রবণতা বেশি। সরকারি এই সংস্থা গত তিন মাসে ময়লা পানির অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা বাসাবাড়ির ট্যাপের পানি পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলসংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পাস) জহিরুল ইসলাম বরাবর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান প্রতিবেদনটি পাঠান।

এরপর হাইকোর্ট পানি পরীক্ষার ব্যয় সংকোচন ও পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে মতামত দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমানকে আদালতে আসতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক সাবিতা মঙ্গলবার হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে তার মতামত তুলে ধরেন।

শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক বলে, ‘মূলত বেশি বাজেটের বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য দূষিত পানি সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে। কেন এটা সাপ্লাই হচ্ছে? এটা এক্সামিনের জন্য। এ এক্সামিনে এত লার্জ স্কেল কেন? স্যাম্পল কীভাবে নেয়া হবে। মূলত পরীক্ষায় খরচ কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে জানতে আপনাকে আসতে বলেছিলাম।’

জবাবে অধ্যাপক সাবিতা বলেন, ‘পানি দূষিত- এমন ঢালাও অভিযোগের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে সুপেয় পানিতে কোনো রকম রং, গন্ধ বা অস্বচ্ছতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। সুপেয় পানি সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এসব লক্ষণ থাকলে অভিযোগ কেন্দ্রে আনা পানির নমুনা চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনায় কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার সংযোগ যেখানে ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৪টি, বর্তমানে তা বেড়ে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৭টি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে পানিতে ময়লা দেখা যাচ্ছে বা ঘোলা, সেটাতো পরীক্ষার দরকার নেই। সেটা রিজেক্টেড। যেটা সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, এমন পরিষ্কার পানি পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে; যা পান করে কোনো এলাকার রোগ ছড়াবার তথ্য মেলে।’

দূষণের প্রকৃত চিত্র পাওয়ার জন্য অভিযোগ আছে এমন এলাকার পানি সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা করার ওপর জোর দেন অণুজীব বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, ‘ওয়াসা ৫৯টি এলাকার পানি নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা কয়েক মাস আগের। ওয়াসার পানির উৎস হল ভূমিস্থ, ভূগর্ভস্থ, শীতলক্ষ্যা বা বুড়িগঙ্গা নদী। এসব উৎসের পানির ধরন ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যেতে পারে। ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের ৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৩টি আউটলেট আছে ধরে আমরা ইতিমধ্যে জানিয়েছি, ৯৯ ভাগ আস্থা অর্জন করতে হলে ১৫ হাজার ৮৫৮টি আউটলেট পরীক্ষা করা প্রয়োজন। অন্তত ৯৫ ভাগ আস্থা অর্জন করতে হলেও এক হাজার ৬৫টি আউটলেট পরীক্ষা করা আবশ্যক।’

আদালত তখন জানতে চায়, চারটি উৎস, বিতরণের ১০টি জোন, দৈবচয়ন ভিত্তিতে দশটি এলাকা এবং ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার পানির নমুনা করলেও মোট ৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করতে হবে; তাতে মোট কত টাকা খরচ হতে পারে।

জবাবে অধ্যাপক সাবিতা বলেন, প্রতি স্যাম্পলে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। সে ক্ষেত্রে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে।

আদেশের পরে অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে যে পানি সুপেয়, দুই দিন পরে কোনো রকম জটিলতার কারণে সে পানি সুপেয় নাও থাকতে পারে। সে কারণে এককালীন পরীক্ষা করে পানির বিষয়টি সমাধান করা যাবে না। পানি সুপেয় না হলে যেটা করণীর সেটার ওপর জোর দিতে হবে। পাইপ লাইনে সংস্কার, কিংবা পানির মান উন্নয়ন।’

অনিরাপদ পানি নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয় আদালত।

রাজধানী ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানির মান পরীক্ষায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কমিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইসিডিডিআরবি, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়। কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

আজকের বাজার/এমএইচ