গ্রামীণফোনের কাছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা পাওনা বিটিআরসি

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা চেয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

বিটিআরসির নিরীক্ষা (অডিট) অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা রয়েছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে বিটিআরসি পাওনা আট হাজার ৪৯৪ কোটি এক লাখ টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা চার হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক ইউএনবিকে জানান, ‘মঙ্গলবার গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) চিঠি দেয়া হয়েছে। নিয়োগকৃত অডিড ফার্মের অডিট রির্পোটের ভিত্তিতে ও সর্বশেষ বিটিআরসি কমিশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা টাকা চেয়ে এ চিঠি দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই টাকা অনেক বছর আগের। আমাদের মূল পাওনা ছিল প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। সুদ বেড়ে এতো বিশাল অঙ্কের টাকা হয়েছে।’

বিটিআরসি’র পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য গ্রামীণফোনকে ১০ থেকে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে বলেও জানান জহুরুল হক।

এদিকে গ্রামীণফোনের উপ-পরিচালক (এক্লট্রানাল কমিউনিকেশন্স) সৈয়দ তালাত কামাল ইউএনবিকে জানান, বিটিআরসি চিঠি আমরা মঙ্গলবার বিকালে পেয়েছি।

এদিকে গ্রামীণফোন একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান ও আইন মেনে চলছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বিটিআরসি যে অর্থ দাবি করেছে, গ্রামীণফোন তার সঙ্গে একমত নয়। বিটিআরসি’র সাথে অনেকবার মিথস্ক্রিয়া ও নিরীক্ষকদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা বাড়ানোর সত্ত্বেও, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, এই নিরীক্ষায় তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়নি।’

নিরীক্ষা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল দাবি করে গ্রামীণফোন জানায়, ‘সমগ্র নিরীক্ষা কার্যপ্রণালীতে ত্রুটি রয়েছে। সেখানে তাদের পর্যবেক্ষণ আমলে নেয়া হয়নি। এখন সঠিক পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য তারা নিজেরাই একটি নিরীক্ষা করবে।’

বিটিআরসি থেকে জানা যায়, অডিটের ভিত্তিতে পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণফোনের কাছে চিঠি দেয় গত বছর। সেটি রিভিজিট বা পূর্ণ মূল্যায়নের জন্য বলে গ্রামীণফোন। নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি পুনরায় মূল্যায়ন করে পুনরায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিটিআরসি’র পুনর্মূল্যায়নেও আপত্তি রয়েছে গ্রামীণফোনের।

২০১৫ সালে অক্টোবরে নতুনভাবে নিরীক্ষা (ইনফরমেশন সিস্টেম অডিট) করার জন্যে একটি প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়োগ দেয় বিটিআরসি।

চুক্তি অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের ব্যবসা শুরুর পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বিটিআরসির নথির সঙ্গে অপারেটরদের আমদানি যন্ত্রপাতির দাম যাচাই করে দেখবে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া অপারেটরের দেওয়া প্রকৃত রাজস্বের হিসেব ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে বিটিআরসি ও এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা। অপারেটরদের আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই ও নিরীক্ষা আওতায় থাকবে।

২০১১ সালে দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে হিসেব নিরীক্ষা করানোয় মোবাইল অপারেটরগুলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে গেলে নিরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়।

২০১১ সালে ৩ অক্টোবর দেশীয় একটি কোম্পানি নিরীক্ষা করার পর গ্রামীণফোনের কাছে তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেয় বিটিআরসি।

গ্রামীণফোন দেশীয় ওই নিরীক্ষার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তোলে। এরপর ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করতে গ্রামীণফোন আদালতে আবেদন করে।

আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর গ্রামীণফোনকে দেওয়া বিটিআরসির চিঠির ওপর ‘স্থিতাবস্থা’ রায় দেয় হাইকোর্ট।

সূত্র – ইউএনবি