তুলার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষকরা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৯ জেলায় তুলার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এক সময়ের অনাবাদি ও পতিত জমিতে তুলা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তুলা চাষিরা। অনেক প্রান্তিক ও বর্গাচাষি অর্থকরী এ ফসল চাষে দিন দিন ঝুঁকে পড়ছেন বলে আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ। কৃষকদের এখন ব্যস্ত সময় কাটছে ক্ষেত থেকে তুলা সংগ্রহের কাজে।

যশোর আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। পাশাপাশি মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল ও রাজবাড়ি জেলায়ও তুলার আবাদ হয়েছে। এ অফিসের আওতায় মোট ৭৭টি তুলা চাষ ইউনিট থাকলেও বর্তমানে চালু আছে ৭৪টি ইউনিট। চলতি মৌসুমে (২০১৮-১৯) এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।তুলা চাষ হয়েছে মোট ১৫ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কুষ্টিয়া জেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে তুলার চাষ হয়েছে।এ জেলায় ৪ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে, ঝিনাইদহ জেলায় ৪ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে এবং যশোর জেলায় ৩ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে। প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসে তুলার চাষ শুরু হয়। জানুয়ারি মাস থেকে তুলা কর্তন শুরু হলেও চলে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।

যশোর আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন অফিসের উপ-পরিচালক মো. জাফর আলী জানান, তুলা চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তুলা উন্নয়ন অফিসের পক্ষ থেকে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ, পরামর্শ, মাঠ দিবস, উঠান বৈঠক, নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে এক সময় যেসব চাষিরা তুলা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা নতুন করে তুলা চাষ শুরু করেছেন। অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে তুলা চাষ বেশি লাভজনক বলে তিনি জানান।

তুলা বীজ থেকে উৎপাদিত ভৈজ্য তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং কোলষ্টেরল তুলনামূলক কম। তুলার চাষ বাড়লে বাজারে এ তেলের সরবরাহও বাড়বে। এছাড়া তুলা বীজের খৈল অধিক প্রোটিন সম্মৃদ্ধ। এ খৈল গরু মোটাতাজাকরণ, পোল্ট্রি এবং মাছ চাষের উত্তম খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। হাইব্রিড রুপালি-১ ও ২ জাতের তুলার ফলন সবচেয়ে বেশি। এ জাতের তুলা প্রতি বিঘায় (৩৩শতাংশ) ১৩ থেকে ১৪ মণ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এছাড়া সিবি ও ডিএম জাতের তুলার চাষ হয়েছে।এ বছর তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রতি মণ তুলার দাম ২ হাজার ৫শ’ টাকা নির্ধারণ করেছে। চরাঞ্চলসহ অনাবাদী জমিতে তুলা চাষ করা গেলে শুধু কৃষকরাই লাভবান হবেন না, তুলা আমদানিতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থেরও সাশ্রয় হবে বলে উপ-পরিচালক জাফর আলী জানান।

যশোর সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের সফল তুলা চাষি আব্দুর রাজ্জাক মিন্টু বাসসকে জানান, তিনি এবছর ৩ বিঘা জমিতে তুলার চাষ করেছেন। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত জমি থেকে ২৩ মণ তুলা ঘরে তুলেছেন।শেষ পর্যন্ত মোট ৪০ মণ তুলা উৎপাদিত হবে বলে তিনি আশাপোষণ করছেন। এবছরও তুলার আশানুরুপ ফলন হয়েছে। তার (মিন্টু) তুলা চাষ দেখে আশপাশের কৃষকরাও তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। প্রতি বিঘা জমিতে তুলা চাষে গড়ে খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এ বছর তিনি কমপক্ষে ১লাখ টাকার তুলা বিক্রি করবেন বলে জানান।

সূত্র – বাসস