দুধে কোনো প্রকার ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়নি: বিএআরসি’র গবেষণা

দেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার ভারী ধাতু, সালফা ড্রাগ ও এন্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)।

বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএআরসির পুষ্টি ইউনিটের করা এক গবেষণা প্রতিবেদন এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের উপস্থিতিতে বিএআরসির পুষ্টি ইউনিটের পরিচালক ড. মো. মনিরুল ইসলাম গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন।

দুধে এন্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদানের অস্তিত্ব নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তার মধ্যে নিজেদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিএআরসি।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে জানানো হয়েছে, পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার ভারী ধাতুর (লিড ও ক্রোমিয়াম) অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে সালফা ড্রাগের (সালফামেথাজিন, সালফামেরাজিন, সালফাডায়াজিন, সালফাপাইরিডিন, সালফাথিয়াজল, সালফামেথোক্সাজল, সালফাক্লোরোপাইরিডাজিন, সালফামেথিয়াজল, সালফামেথোক্সিপাইরিডাজিন, সালফাডোক্সিন ও ট্রিমেথোপ্রিম) অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়নি।

মোট ১৬টি নমুনার মধ্যে শুধু একটি নমুনায় স্ট্রেপটোমাইসিনের উপস্থিতি প্রতি কেজিতে ১০ মাইক্রোগ্রামের নীচে পাওয়া গেছে। তবে তা মানবদেহের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক নীচে বলে জানিয়েছে বিএআরসি।

অন্য একটি নমুনায় শুধু ক্লোরামফেনিকলের উপস্থিতি প্রতি কেজিতে ০.০৬ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। বিএআরসি বলছে, দুধের ক্ষেত্রে ক্লোরামফেনিকলের কোনো প্রকার নির্ধারিত মাত্রা পাওয়া যায়নি। তবে কারও কারও মতে ০.১ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।

বিশ্লেষণকৃত নমুনাসমূহে অন্য কোনো প্রকার এন্টিবায়োটিকের (টেট্রাসাইসিলিন, ক্লোরটেট্রাসাইসিলিন, অক্সিটেট্রাসাইসিলিন, ৪-এপিটেট্রাসাইসিলিন, ৪-এপিঅক্সিটেট্রাসাইসিলিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্লোরামফেনিকল ও স্ট্রেপটোমাইসিন) অবশিষ্টাংশ বা অস্তিত্ব মেলেনি।

বিএআরসি জানিয়েছে, পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত এসব দুধের নমুনাসমূহ বিশ্লেষণে সংগ্রহ হতে শুরু করে বৈদেশিক ল্যাবরেটরিতে পৌঁছানো পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড অনুসরণ করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান/এক্রিডেটেড ল্যাবরেটরি এসজিএস (চেন্নাই) হতে পরীক্ষা করা হয়।

এছাড়াও, প্রতিটি পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের নমুনাসমূহ সরাসরি বিশ্লেষণসহ একই সঙ্গে এসব দুধের প্রতিটি নমুনা নয় মিনিট সেদ্ধ করে এন্টিবায়োটিক, সালফা ড্রাগ ও ভারী ধাতুর অবশিষ্টাংশের উপস্থিতিও বিশ্লেষণ করা হয়।

বিএআরসি বলছে, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত বাজারজাতকৃত দুধ পানে কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।

বিএআরসি আরও বলছে, বিভিন্ন সময়ে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী ব্যক্তিবর্গ কোন প্রকার বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত বা কোন প্রকার মানসম্পন্ন গবেষণা ফলাফল ব্যতিরেকে অনেকটা দায়সারা রিপোর্ট তৈরি করে ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন পণ্যের মান নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে চলেছে। বিগত বছরগুলিতেও এসব লোকেরা ফল-সবজি, মাছসহ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন প্রয়োগ করা হয় বলে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে।

আজকের বাজার/এমএইচ