বরগুনায় ছাদ, বারন্দার পাশাপাশি পুকুরে ভাসমান সবজি বাগান জনপ্রিয় হচ্ছে

জেলায় ছাদ,বারান্দার পাশাপাশি পুকুরে ভাসমান সবজি বাগান ও জনপ্রিয় হচ্ছে।দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন খালে বা জলাশয়ে গতানুগতিক যে সবজি বা শাক চাষাবাদ হয় তার ব্যাতিক্রম বরগুনার ভাসমান সবজি বাগান। এখানে ভাসমান ড্রাম ব্যবহার করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সদর উপজেলা পরিষদের পুকুরে এ সবজি বাগান করা হয়েছে।রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড়বড় শহরগুলোতে বাড়ি বা অফিস ভবনের ছাদে ফুল-ফলের বাগান অহরহ নজরে পড়ে। মূলতঃ গণমাধ্যমের সুবাদে সেই উদ্যোগ অনুপ্রাণিত করছে মফস্বল শহরের মানুষকেও। ঢাকার মানুষের মতো মফস্বলের মানুষদের চাষ করার জায়গার অভাব না থাকলেও শখের বসে অনেকেই দালানের বারান্দা, ছাদে বাগান গড়ে তুলছেন। উপকূলীয় জেলা বরগুনার জেলা ও উপজেলা শহরগুলোসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে কয়েক হাজার বাড়িতে বারান্দা ও ছাদ-বাগান শুরু করেছেন বাগান বিলাসী মানুষেরা। গ্রামগুলোও এ সংস্কৃতিতে এগিয়ে আসছে। এ কৃষির মূল ধারকও সেই আদি কৃষক ‘নারী’। সাথে আছে রুচিশীল কিশোর-কিশোরীরা। ধারাবাহিক ভাবে এ কৃষির আবাদ বাড়ছে।বরগুনার আমতলী পৌর শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোডের ‘নীড়-এ-বুলবুল’ দ্বিতল ভবনের ছাদে ১৯৯৫ সালে প্রথম পরিকল্পিত ছাদ-বাগান তৈরী করা হয় বলে জানা গেছে। বরগুনা সদরের সোনাখালীর হাসান নামের এক বেকার যুবক সেখান থেকে বিনামূল্যে চারা ও কলম নিয়ে একটি বাণিজ্যিক নার্সারির শুরু করে এবং সফলতা পায়। পরবর্তিতে এ শহরে পরিকল্পিত ছাদ কৃষি গড়ে তোলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শাহজাদা, ২০১৫ সালে তার বাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদে তার সফলতা দেখে আমতলী পৌর শহরে গত চার বছরে শতাধিক কৃষক ছাদে বিভিন্ন ফুল, ফলদ গাছ ও সবজি চাষ করছেন। বরগুনা শহরে বাগান গড়েছেন কলেজ শিক্ষক অলি উল্ল্যাহ। বাগানে তিনি আম, কমলা, কামরাঙ্গা, ডালিম, ছবেদা, চাইনিচ কমলা, লেবু, জলপাই, পেয়ারা, বড়ই, মালটা ও আমড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ লাগিয়ে ফল উৎপাদন করছেন।

পূর্ব চন্দ্রা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের ছাদের উপরে সারিবদ্ধ ভাবে ড্রাম দিয়ে তাতে ফলদ, বনজ ও সবজি গাছ লাগানো হয়েছে। গাছে ফল ধরেছে। আমড়া গাছে থোকায় থোকায় আমড়া ঝুলছে। মালটা গাছে মালটা, কমলা গাছে কমলা, লেবু গাছে লেবু, কামরাঙ্গা গাছে কামরাঙ্গা ধরেছে। এছাড়া গোলাপ, গাঁদা, জুই, চামেলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ রয়েছে। ফুলের পাশাপাশি রয়েছে সবজি গাছ লাউ, পুঁই শাক ও বেগুন প্রভৃতি। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম জানিয়েছেন, তিনি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পালা করে গাছের পরিচর্যা করেন। ছাদ কৃষক ব্যাংকার রাসেল হোসেন জানান, গত দুই বছর পূর্বে ছাদে কৃষি আবাদ করি। প্রথমে শখের বসে করলেও এখন পুষ্টিকর ও মান সম্মত খাবারের জন্য ফলদ ও সবজি চাষ করছি। ছাদের বাগানে মিষ্টি জলপাই, লিচু, আমরুল, ছফেদা, নাগপুরি কমলা ও থাই কমলার ফলন ভালো হয়েছে। ছাদ কৃষক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, সখের বসে মেহেদি, লেবু ও পেয়ারা গাছ লাগিয়েছি। তবে অধিকাংশ সময়ে এ কৃষির দেখভাল করেন পরিবারের নারী সদস্যরাই বলে জানিয়েছেন তারা। লাউ, কুমড়ো, শসা, শিম প্রভৃতি তিনি ছাদের বাগান থেকেই সংগ্রহ করেন এবং পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবেশিদেরও উপহার দেন। জানিয়েছেন, আঠারোগাছিয়া ইউপি’র সাবেক সদস্য নারী জনপ্রতিনিধি মুকুল বেগম।

জেলা কৃষি বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তা, এসএম বদরুল আলম জানান, ছাদ বাগানে সাধারণত, মাটি বা প্লাস্টিকের টব, কাটা অর্ধেক ড্রাম ব্যবহার করা হয়। যেসকল গাছের জন্য কম মাটি ও আকারে ছোট জাতের গাছ হলে পরিচর্যা সহজ হয়। বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখতে হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে মাটির গুনাগুন অব্যাহত থাকেনা বলে সেগুলোর সংযোজন করা জরুরী। ছাদ কৃষিতে উৎপাদিত ফসল যেমন বিষমুক্ত তেমনি এর পরিবেশটাও মনোমুগ্ধকর। তিনি আরো বলেন, ছাদ-কৃষি বিস্তারের ক্ষেত্রে কারিগরি ও প্রযুক্তির সহায়তার অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউর রহমান জানান, ছাদ-কৃষি দেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। মানুষ ছাদ কৃষিতে এগিয়ে আসলে কৃষি সম্প্রসারিত হবে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক সহকারি পরিচালক ডা. মোস্তাক আল মেহেদি বলেন, ছাদ-কৃষি’র ছাদবাগান কিংবা আমাদের অনেকের বারান্দা-বাগানগুলোতে যেমন ফল উৎপাদন করা হচ্ছে তেমনি এ বাগানগুলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী। এ বাগানে দেয়া কায়িক শ্রম এবং বাগান থেকে পাওয়া মানসিক প্রশান্তি দৈনন্দিন জীবনে মানুষের স্বাস্থ্যগত গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং ভৌগোলিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের সুরক্ষা লক্ষ্যে সবুজ অফিস ব্যবস্থপনার অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছাদেও ফলজ, ওষুধি ও নান্দনিক ফুলের চারাগাছ সমন্বিত ছাদ-বাগান “সবুজ কানন” শুরু করেছেন। এ বাগানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান