বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ: স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট তুর্ক

স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. দানিলো তুর্ক শনিবার বলেন, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও দেশটির সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে।

তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উদ্বেগের বিষয় হলেও যুক্তরাজ্যের বিকল্প নেই। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র।

২০০৭ থেকে ২০১২ মেয়াদে স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ড. দানিলো তুর্ক নগরীর একটি হোটেলে ‘ইইউ অ্যান্ড দ্য কনটেম্পরারি গ্লোবাল সিনারিও: এ রিফ্লেকশন ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক এক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কসমস গ্রুপের জনহিতকর প্রতিষ্ঠান কসমস ফাউন্ডেশন ‘ডিস্টিংগুইশ স্পিকার্স লেকচার সিরিজ’ এ সংলাপের আয়োজন করে।

কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (আইএসএএস) প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

বাংলাদেশকে ইউরোপীয় কমিশনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে ড. তুর্ক বলেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছে।

তিনি ইউরোপীয় কমিশনের বৈদেশিক বিষয়ক ও সুরক্ষা নীতি সম্পর্কিত ইউনিয়নের উচ্চ প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় কমিশনের সহ-সভাপতি জোসেপ বরেলের সাথে দেখা করার পরামর্শ দেন।

‘জোসেপ আপনাদের একজন প্রথম সারির বন্ধু,’ যোগ করেন তিনি।

১৯৭৩ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ও ইইউ গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে। এ গোষ্ঠীটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। প্রতি বছর বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে প্রায় ৭০-৮০ মিলিয়ন ইউরো উন্নয়ন সহযোগিতা হিসেবে পায়। ইইউ থেকে পাওয়া উন্নয়ন সহযোগিতার পুরোটাই বাংলাদেশ অনুদান হিসেবে পায়।

সংলাপের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞগণ আলোচনায় অংশ নেন। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সাম্প্রতিক বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনায় তাদের মতামত উঠে আসে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক ইইউ বাংলাদেশকে যে বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে তাকে ‘মূল বিষয়‘ হিসেবে উল্লেখ করেন। যা বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সহায়তার চেয়ে বেশি সাহায্য করবে বলে মনে করেন তিনি।

ইইউ থেকে বিশ্বের ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে সরবরাহ করা সুবিধাগুলো থেকে বাংলাদেশকেই সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেয়া হয়, জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নে পাঠানো সকল পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রায় ৭০ শতাংশ বাণিজ্যিক সুবিধা পেয়ে থাকে। যা মূলত তৈরি পোশাক খাত নির্ভর।

রেন্সজে তেরিংক বলেন, আমি মনে করি এটা এ দেশের জন্য অনেক সহায়ক। পৃথিবীতে আর এমন কোনো সংগঠন নেই যারা বাংলাদেশকে এ ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ প্রায় ১০ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০১৯ বলছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সেবা আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে।

তেরিংক বলেন, ‘এটাই হলো আমাদের (ইইউ) বাংলাদেশের সাথে কাজ করার আগ্রহের বিষয়।’

স্লোভেনিয়ান কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ড. দানিলো তুর্ক ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে স্লোভেনিয়ার প্রথম রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেই সাথে তিনি ২০০০ থেকে ২০০৫ মেয়াদে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

‘অদৃশ্য সীমানা’

স্বাগত বক্তব্যে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, বিগত বছর জুড়ে কসমস ফাউন্ডেশন তাদের লক্ষ্য পূরণে মনোনিবেশ করেছে।

‘আমরা আমাদের বন্ধুদেরকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নীতিমালার বিকল্পগুলো সরবরাহ করেছি। এবং চাপ দেয়ার বিষয়ে কৌশলগত অন্তরদৃষ্টি দিয়েছি।’

তিনি বলেন, এই ফাউন্ডেশন বিশ্বব্যাপী বিশিষ্ট বক্তাদের তাত্ত্বিক বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের বহিঃসম্পর্কের বিষয়ে বেশ কয়েকটি উৎসাহব্যঞ্জক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা একটি সিম্পোজিয়াম আয়োজনের পরিকল্পনা করছি যাতে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের তাত্ত্বিক বিষয়গুলোতে সকলের জোর দেয়া উচিত। এটি পূর্ব ও পশ্চিমের নীতির রূপ দেয়ার মান নিয়ে একটি বিতর্ক হতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।

ড. ইফতেখার বলেন, বিশ্ব এখন অনেকটাই পরস্পরের সাথে সংযুক্ত এবং অঞ্চলগুলোর সীমানা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘সার্বভৌমত্বের বিধি দ্বারা সুরক্ষিত অঞ্চলগুলো আলাদা দেশের অঞ্চলগুলোর মতো নয়। আঞ্চলিক সংস্থাগুলো প্রায়শই সার্কের মতো প্রধান রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্কের কাছে জিম্মি হয়ে থাকে। যেমন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের ফলে এটি অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।’

তবে, এখানে ইইউ রাষ্ট্রসমূহের একত্রিত হওয়ার ভালো দৃষ্টান্ত রয়েছে।

‘যদি কার্যকরী পর্যায়ে দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা হয়, তবে শেষে আরও সমালোচনামূলক পর্যায়ে মূল বিবাদটি বিলুপ্ত হয়ে যায়,’ বলেন তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ডা. ইফতেখার বলেন, ব্রেক্সিটের প্রভাব কেবল ইউরোপ নয়, এমনকি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও পড়বে। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ