শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ: কাজ পাচ্ছে অ্যাভিয়েশন কনসোর্টিয়াম ঢাকা

প্রাথমিক হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পেতে যাচ্ছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে অ্যাভিয়েশন কনসোর্টিয়াম ঢাকাকে (এসিডি) কাজের জন্য ইতিমধ্যে বাছাই করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এ দরপত্রে আরেক প্রতিযোগী ছিল জাপানি প্রতিষ্ঠান শিমিজু-আইটিডি-জেভিজি জেভি।

বর্ধিত ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন করা প্রসঙ্গে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটি উচ্চ অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হওয়ায় কমিটি আর দেরি করতে চায়নি।

তিনি জানান, মন্ত্রিসভা কমিটি একটি শর্ত দিয়ে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। শর্ত হলো- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত ব্যয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি সংশোধিত প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) থেকে অনুমোদনের উদ্যোগ নেবে।

মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিটা করপোরেশন ও স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামটি কাজের জন্য ২০ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকার চুক্তি মূল্য প্রস্তাব করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

তারা জানায়, জাপানি দাতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং বাংলাদেশ সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।

কাজের সবিস্তার বিবরণী অনুযায়ী, টার্মিনাল ও নিরাপত্তা যন্ত্রপাতিসহ ২২ হাজার ৬০০ বর্গমিটারের তৃতীয় যাত্রী টার্মিনাল, ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটারের নতুন কার্গো টার্মিনাল, ২২ হাজার ও ২৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটারের র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে (উত্তর ও দক্ষিণ), ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ বর্গমিটারের অ্যাপ্রোন, ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটারের ট্যাক্সিওয়ে সংযোগ, ৬২ হাজার বর্গমিটারের বহুতল গাড়ি পার্কিং এবং প্রবেশ ও বাহিরসহ সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে।

এছাড়া, প্রকল্পের আওতায় পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ বিতরণ, কার্গো কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি, বিমান উঠা-নামার জন্য ভূমিতে লাইট বসানো এবং জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপন থাকছে।

সূত্র জানায়, বাছাই করা ঠিকাদার যে খরচ উল্লেখ করেছে তা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) উল্লেখিত অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং একনেকে অনুমোদন পাওয়া সরকারের আনুমানিক ব্যয়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।

তবে, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদ এসিডির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়ে তা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়।

তারা জানান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় যে বিষয়টি বিবেচনা করেছে তা হলো, এটি সরকারের একটি অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প এবং খরচ বেড়ে যাওয়ায় যদি আবার নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয় তাহলে অনেক সময় যাবে ও খরচ হয়তো আরও বেড়ে যেতে পারে।

কর্মকর্তারা আরও জানান, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পর তারা এসিডিকে কাজ দিতে প্রতিষ্ঠানটির সাথে চুক্তিতে যাবেন।

একনেক ২০১৭ সালের অক্টোবরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন করে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের সময়সীমা ঠিক করে এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকার ১১ হাজার ২১৪ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল।ইউএনবি।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান