১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রিন লাইনের সব গাড়ি জব্দ করা হবে

বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারের চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে গ্রিন লাইন পরিবহনের সব গাড়ি জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

আদালত গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তারের উদ্দেশে বলেছেন, ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের ১১ এপ্রিলের সব রুটের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে হবে। ১০ এপ্রিল এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দিবেন আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে আজ সকালে আদালতের আদেশের পরেও রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় পরিবহন সংস্থাটির ব্যবস্থাপককে তলব করেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে হাজির হন গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তার।

আদালতের কাছে আব্দুস সাত্তার বলেন, গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিক মো. আলাউদ্দিন অসুস্থ। তিনি চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। আগামী ৯ এপ্রিল তিনি দেশে ফিরবেন।

তখন আদালত বলেন, আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। ১০ এপ্রিল আমরা পরবর্তী আদেশ দিব।

আদালত আরো বলেন, ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে আমরা গ্রিন লাইনের সব গাড়ি সিজ করে ফেলব।

এ সময় আদালত ১১ এপ্রিলের গ্রিন লাইন পরিবহনের সব রুটের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে বলেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার শামসুল হক রেজা। গ্রিন লাইনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. অজিউল্লাহ।

গত ৩১ মার্চ গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারের চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।

আইনজীবী শামসুল হক রেজা বলেছিলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকারের চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলে গত বছরের ১৪ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেছিলেন।

এরপর হাইকোর্ট রুলের শুনানি নিয়ে ভিন্ন একটি বেঞ্চ রাসেলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকারের চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।

এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।

আজকের বাজর/এমএইচ