২ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ পেল ডিজিটাল স্টার্ট-আপরা

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দপীনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল ডিজিটাল উদ্যোক্তা গড়ে তোলোর উদ্যোগ আর-ভেঞ্চারস ২.০। সম্প্রতি (ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আর-ভেঞ্চার ২.০’র ইনভেস্টমেন্ট ডে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ১২টি উদ্যোক্তা দল অংশগ্রহণ করে। এসময় উদ্যোক্তাদের জন্য ২ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়।

আইসিটি বিভাগের অধীন স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের ৭৩ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্র্যান্ট প্রদান করেছে। ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে এ প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে দেশের শীর্ষ ডিজিটাল সেবাদাতা কোম্পানি রবি।
সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে সিগমাইন্ড। প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সেবা প্রদান করে থাকে।

অংশগ্রহণকারী অন্যান্য স্টার্ট-আপগুলো ভেলবেট বক্স সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে নারীদের স্যানিটারি পণ্য সরবারহ করে থাকে, ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে নগদ অর্থ ছাড়া ডিজটাল টি স্টল সেবা প্রদান করে ডিজিটং, ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্টদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী একটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে উপার্জন, আলো একটি মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম যারা বিজ্ঞাপন দেখানোর উদ্দেশে পাবলিক বাসে স্ক্রিন সরবরাহ করে এবং অনলাইনে অর্ডার নেয়ার মাধ্যমে জ¦ালানি সরবরাহ করে ফুয়েলবি।
অন্যদিকে অনলাইন টিউটরিং প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে এডুমেট, বাসায় তৈরী খাবার ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয় কুকঅ্যান্ডস, অন ডিমান্ড গৃহকর্মী বা গৃহস্থালী কাজের জন্য কর্মী সরবরাহের সেবা প্রদান করে হ্যালো টাস্ক, টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করে ডক্টর বন্ধু, খামার ব্যবস্থাপানার জন্য আইওটি ডিভাইস সরবরাহ করে খামারি এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চশমা সরবরাহ করে আলো।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিনিয়োগের অর্থ তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইই ঢাকা’র প্রেসিডেন্ট রুবাবা দৌলা এবং ব্যাংক এশিয়া’র প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আরফান আলী।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, রবির চিফ ডিজিটাল সার্ভিসেস অফিসার শিহাব আহমেদ, চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম , আর-ভেঞ্চার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিনিয়োগকারী ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আর-ভেঞ্চারস ২.০’র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিলেন রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, দ্য অ্যাঞ্জেলস নেটওয়ার্ক’র প্রেসিডেন্ট সোনিয়া বশির কবির, আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড’র সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর আরিফ খান এবং বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের স্টার্টআপ বাংলাদেশের ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজর টিনা এফ জাবিন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি বলেন, “সমস্যার কথাতো সবাই বলেন, কিন্তু সম্ভাবনার পথ দেখান কেবল সাহসীরা। আর এই সাহসী উদ্যোক্তারাই গড়ে তুলবেন আগামীর ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা আজ সেই রকম সাহসী উদ্যোক্তাদের দেখলাম যারা আপনাদের সামনে তাদের ধারণা উপস্থাপন এবং সমস্যাগুলোকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করলেন। স্টার্টআপ বাংলাদেশ ও আইসিটি বিভাগ তাদের পাশে আছে যাদের পাশে কেউ নেই।”

রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন “প্রায় এক বছর আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের সাথে এই ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়ে আমরা পরিকল্পনা শুরু করি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতাটি কীভাবে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া যায়। সেখান থেকেই মূলত আর-ভেঞ্চার ২.০’র ধারণাটা আসে। আজ আমরা ২২৬টি ধারণা থেকে ১২টি ধারণা নিয়ে এখানে হাজির হয়েছি। এটা অনেকটা উদ্যোক্তা আন্দোলনে পরিণত হতে যাচ্ছে।”

নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিজিটাল উদ্যোক্তা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে আর-ভেঞ্চারসের প্রথম পর্বের আয়োজন করে রবি। সেই সাফল্যের প্রেক্ষিতে সবার জন্য ডিজিটাল উদ্যোক্তা হওয়ার পথ খুলে দিতে চলতি বছরের জুলাইয়ে আর-ভেঞ্চার ২.০ প্রকল্পটি শুরু করে অপারেটরটি।

প্রতিযোগিতার শুরুতে www.robiventures.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে আগ্রহী ব্যক্তি বা দল তাদের ব্যবসায়িক ধারণা জমা দিয়েছিলেন। মাত্র ২০ দিনে ২ হাজার ২২৬টি ধারণা জমা পড়ে। এরপর জমাকৃত ধারণাগুলোর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ১৫০টি ধারণা বাছাই করা হয়। এই ধাপ থেকে ৫০টি ধারণা বাছাই করে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এরপর ওই প্রতিযোগীরা অভিজ্ঞ বিচারকদের সামনে তাদের ধারণা উপস্থাপন করেন। এভাবে সূক্ষ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নির্বাচন করা হয়েছে।

কোন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য শুধু ধারণাটিই যথেষ্ট নয়। ধারণাটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা ও প্রাসঙ্গিক জ্ঞান। এক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ ডিজিটাল কোম্পানি রবির অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আর-ভেঞ্চারের উদ্যোক্তাদের চলার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।