আইপিও শেয়ারেও আরোপ হচেছ সার্কিট ব্রেকার

শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রথমদিনেই সার্কিট ব্রেকার আরোপ করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আইপিওতে আসা কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এমন পরিকল্পনা করছে কমিশন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, আইপিও-তে আসা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন পর্যবেক্ষণ করছে কমিশন। আইপিও শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দর বাড়লে শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করে দেখবে কমিশন।

বিএসইসির কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন, সার্কিট ব্রেকার না থাকার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র আইপিও শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে। অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী অসচেতনতার কারণে ও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পড়ে উচ্চ মূল্যে শেয়ার কেনাবেচা করছেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে শেয়ারদর বাড়াতে মালিকপক্ষের সংশ্নিষ্টতার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আইপিও শেয়ার লেনদেনে স্বচ্চতা আনার অংশ হিসাবে কমিশন সার্কিট ব্রেকার আরোপের চিন্তা-ভাবনা করছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার দর নির্দিষ্ট দিনে কত শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারবে, তা একটি পূর্বনির্ধারিত ফর্মুলা রয়েছে। একে সার্কিট ব্রেকার বলা হয়। ওই ফর্মুলা অনুযায়ী আগের দিনের সমাপনী দরের ওপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরের সীমা আরোপ করা হয়। ওই সীমার বাইরে সংশ্নিষ্ট শেয়ার কেনাবেচা হতে পারে না।

শেয়ারবাজারে আইপিও শেয়ার লেনদেনের প্রথম দুই দিন কোনো সার্কিট ব্রেকার থাকে না। অর্থাৎ ওই দু’দিন যে কোনো মূল্যে শেয়ারটি কেনাবেচা হতে পারে। এমন সুযোগ রাখার কারণ প্রসঙ্গে সাইফুর রহমান বলেন, আইপিওতে আসা শেয়ারের যৌক্তিক মূল্য (ফেয়ার ভ্যালু) নির্ধারণ করার স্বার্থে সার্কিট ব্রেকার রাখা হয় না। বাজারকেই প্রকৃত দর খুঁজে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

জানা যায়, চলতি বছরের আইপিও প্রক্রিয়ায় ৬টি কোম্পানি ও ২টি মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির শেয়ার ১০০ টাকার ওপরে কেনাবেচা হয়েছে। যদিও মিউচুয়াল ফান্ড দুটি কেনাবেচা হচ্ছে অভিহিত মূল্যে ১০ টাকার নিচে।

চলতি বছরে আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে নূরানী ডাইং, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্যাসিফিক ডেনিম লেনদেনের শুরুতে যে দরে কেনাবেচা হয়েছে, এর তার অনেক কম মূল্যে কেনাবেচা হচ্ছে।একমি ল্যাবরেটরিসহ ২/১টি ব্যতিক্রম বাদে গত পাঁচ বছরে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা গেছে।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া বিবিএস কেবলসের লেনদেন শুরু হয় গত ৩১ জুলাই। লেনদেনের প্রথম দিনে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৯৪ টাকায় কেনাবেচা হয়। পরে নানা গুজব ছড়ানোর কারণে শেয়ারটির দর ১৫৮ টাকা ওঠে। এতে মালিকপক্ষের সংশ্নিষ্টতাসহ সুনির্দিষ্ট কারসাজিরও প্রমাণ মিলেছে। এ বিষয়ে তদন্তের পর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ কমিশনে প্রক্রিয়াধীন। এরপর গত ৬ নভেম্বর তালিকাভুক্তির পর লেনদেনের প্রথম দিনে ওইমেক্স ইলেক্টোডের শেয়ারদর ওঠে ১২০ টাকা। এটিও আইপিওতে ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। শেয়ারবাজারের স্বার্থান্বেষী একটি চক্র এ কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে বলে তথ্য রয়েছে।

একই অভিযোগ আছে বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় ৩৫ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি হওয়া আমরা নেটওয়ার্কসের শেয়ার নিয়ে। গত ২ অক্টোবর সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরুর দিন সর্বোচ্চ দর ওঠে ১৫০ টাকা।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৩ নভেম্বর ২০১৭