আজ মধ্য রাত থেকে ইলিশ আহরণে নামবে জেলেরা

জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রোববার রাত ১২টায়। এরপর থেকে নদীতে মাছ আহরণ করার জন্য পস্তুতি  নিয়েছে জেলেরা। জেলার প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত  নৌ সীমানায়  মাছ আহরণ করতে নামবেন। তবে জাটকা রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করার জন্য  জেলা টাস্কফোর্সের ্র সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিলো।
চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষই মাছ আহরণ ও কৃষিকাজ করে । জেলেদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে গুল্টিজাল ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে। কিন্তু এক শ্রেণীর জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা আহরণ করে। আইন অমান্য করে জাটকা ধরায় ১মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭১ জেলে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়।
এদিকে দুই মাস বেকার অবস্থায় থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে পস্তুতি নিয়েছে জেলেরা। সরে জমিনে সদর পৌরসভার  শহরের টিলাবাড়ি এলাকা, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া, বহরিয়া, হানারচর ইউনিয়নের হরিণা মাছঘাট, আখনের হাট, আনন্দ বাজার এলাকায় দেখাগেছে জাল ও নৌকা মেরামত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। জাল মেরামত করার জন্য  কিছু লোক ঠিক এ সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন এ সব এলাকায়।
সাখুয়া এলাকার জেলে মফিজ মিয়া জানান, সরকার জাটকা না ধরার জন্য যে অভিযান চালায়  আমরা তা মানি,  কিন্তু  কতিপয় জেলে এসে অধিকাংশ জাকটা ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষ হলে আমরা তেমন মাছ পাইনা। আমরদের  ঋণ করে নতুন জাল ক্রয়, নৌকা মেরামত কাজে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এরপর নদীতে মাছ না পাওয়াগেলে আমাদের খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
একই এলাকার জেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদেরকে যে পরিমান খাদ্য সহায়তা করা হয়, । এ সহায়তা আরো বাড়ালে ভালো হতো।
বহরিয়া এলাকার জেলে মো. শাহজাহান খান বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার যে অভিযান দেয়, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো কঠোর হওয়া দরকার। তাহলে কোন জেলেই নদীতে নামতে পারে না। আনন্দ বাজারের জেলে ইয়াকুব আলী বলেন, এ বছর আশা করি গতবছরের তুলনায় বেশি ইলিশ উৎপাদন হবে, কারণ আমাদের স্থানীয় জেলেরা নদীতে জাটকা ধরা বন্ধ রেখেছিলো গত দুইমাস।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এবছর আমরা কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ এর সম্বন্বয়ে নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি নদীতে জাটকা নিধন ঠেকাতে, এবং প্রতিটি অভিযানে অবৈধ কারেন্ট জাল, নৌকা ও জেলেদের আটক করেছি। আমার আশাবাদ এ বছরে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে আগের চেয়ে।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, জাটকা রক্ষার অভিযানের শুরু থেকে আমরা দিন ও রাতে এবং স্পেশাল অভিযান করেছি। এসব অভিযানে জাটকা ধরা অবস্থায় আমরা প্রায় ৪শ’ জেলেকে আটক করেছি। এসব ঘটনায় প্রায় ৩৯টি মামলা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার দুই মাসের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমাদের জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সর্বাত্মক চেষ্টা  ছিলো। জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ সকলে মিলে আমরা এ অভিযান সফল করেছি। এরপরেও কিছু অসাধু জেলে মাছ আহরণ করেছে। যার ফলে অভিযানকালে ৩৪৭টি মামলা হয়েছে এবং জেল হয়েছে ৩৭১জন জেলের।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করছি এ অভিযানের ফলে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। যা ইলিশের জাতীয় উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে। এর সুফল অভিযানের সময় মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেরা পাবে। তারা আরো বেশী ইলিশ পাবে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে এর সুফল দেশের মানুষ পাবে।   জেলেদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য সরকার এ বছর অভিযানের পূর্ব থেকেই ৪০ কেজি করে ৪ মাস খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।