কোটা সংস্কার

এবার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রীরা

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। অনেকে আবার নেতৃত্বও দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ছাত্রীদের এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে তেমন একটা দেখা যায়নি।

তবে সময়ের পরিক্রমায় এবার এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছেন নারীরা। নিতে শুরু করেছেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এককভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়।

বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের এ ঘোষণা দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র যুগ্ম আহ্বায়ক আফসানা সাফা ইমু।

সংবাদ সম্মেলনে ইমু বলেন, আমরা যৌক্তিক একটি আন্দোলন করছি। কিন্তু সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগ হামলা করে। যারা হামলা করেছে তাদের আটক না করে যারা অপরাধ করেনি তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আটকদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবো। তাদের জেলে রেখে আমরা ক্লাসে যাব না।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সেখানে শুধু ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভাবছেন এবার আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।

তারা বলছেন, ছাত্রীরা যেহেতু ডিসিশন মেক করতে পারছেন তাহলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। এবার আন্দোলন সফল হবেই।

এদিকে ‘বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র শীর্ষ কয়েকজন নেতার গ্রেফতার, রিমান্ড এবং অন্য শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেফতার আতঙ্কে থাকায় ছাত্রীদের দায়িত্ব নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন সংগঠনটির একাধিক নেতা।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের উপর হামলা, পুলিশি হয়রানীসহ রাশেদকে রিমান্ড নেওয়ার প্রতিবাদে গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রীরা। প্রথমে রোকেয়া হলে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরাও বিক্ষোভে নামে। স্লোগানে স্লোগানে হল দুটোকেই মুখরিত করে রাখেন তারা।

পরদিন ছাত্রীদের নেতৃত্বে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশরাই ছিলো ছাত্রী। এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের চাপে সাধারণ ছাত্ররা অনেকাংশেই ইন-একটিভ। সেখানে মেয়েরা মনে করেছে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এছাড়া যেকোনো আন্দোলনে মেয়েদের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব দাবি আদায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা আমজাদ আরও বলেন, নেতৃত্বস্থানীয়রা অনেকেই গ্রেফতার। নির্যাতনের ভয় রয়েছে আরও। ছাত্রলীগ সারাদেশে যেভাবে আন্দোলনকারীদেরকে পিটিয়ে আহত করেছে তাতে ছেলেদের চাইতে মেয়েদের নেতৃত্ব দেওয়া অনেকটা নিরাপদ।

আন্দোলনের শুরু থেকেই অংশ নিয়েছেন এমন একজন ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেখুন, নেতৃত্ব কে দিলো সেটা বড় কথা নয়। দাবি আদায় হওয়াই মূল ব্যাপার। যেহেতু ভাইদের সময় ভালো যাচ্ছেনা, তাই আপুরাই দায়িত্ব নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আর প্রজ্ঞাপন হওয়াই এখন শেষ কথা নয়। আন্দোলনকারী ভাইদের জেল থেকে মুক্তি, হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনাসহ অনেক দাবি এখন আমাদের। তাই আন্দোলন অব্যাহত না রাখলে কোনো দাবি আদায় হবেনা। তাই প্রয়োজনের তাগিদে ছাত্রীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে।

আরএম/