আপাতত সরাতে হচ্ছে না হাতিরঝিলের স্থাপনা; আপিলের অনুমতি

ঢাকার হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) আপিলের অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। ফলে আপাতত স্থাপনা সরাতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছে আইনজীবীরা। আদালতে রাজউকের পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও আইনজীবী মো. ইমাম হাছান। অপরপক্ষে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে আউট প্ল্যানের নির্দেশনার বাইরে কতিপয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে হাইকোর্টে রিট করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।

ওই সময় রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরে ওই রুলের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট এ রায় দেয়। ওই রায়ে বলা হয়, ‘প্রতিটি ফোটা পানি অতি মূল্যবান। পানির চেয়ে তথা সুপেয় পানির চেয়ে মুল্যবান আর কোনো সম্পদ এ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।’

পানির অস্তিত্ব নিয়ে হাইকোর্ট বলেছে, দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই। এ পৃথিবী ছাড়া আর কোনো গ্রহে পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ফোটা পানি এ পৃথিবীর বাহির থেকে আনতে সক্ষম হয়নি। অথচ এ খরচের শতভাগের একভাগ টাকা খরচ করলে আমরা আমাদের গ্রহের পানিকে দূষণমুক্ত করে ব্যবহার যোগ্য রাখতে সক্ষম।

হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নিয়ে উচ্চ আদালত বলেন, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না।

রায়ে হাইকোর্টের চারটি নির্দেশনা হলো-

১. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকা যা হাতিরঝিল নামে পরিচিত পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি তথা জনগণের জাতীয় সম্পত্তি।

২. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সবধরণের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ।

৩. হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো।

৪. এ রায়ের অনুলিপি প্রপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এছাড়াও হারিঝিলের বিষয়ে উচ্চ আদালত কিছু পরামর্শ দেয়। সেগুলো হলো- হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ী সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ তথা ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন করা। নির্ধারিত দূরত্বে বিনামূল্যে জনসাধারণের জন্য পান করার পানির ব্যবস্থা করা। পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা। পানির জন্য ক্ষতিকর হেতু লেকে সব ধরণের যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা। হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ী সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করার পরামর্শ দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া হাইকোর্ট এ মামলাটিকে চলমান রাখেন।

গত বছরের শেষের দিকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এরপর রাজউক আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। এ আবেদনের পর গত ৭ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেয় আপিল বিভাগ। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান