ইংল্যান্ডের শ্রমিক ফুটবলাররা যেভাবে রাশিয়া সফর করেছিলেন

এই গ্রীষ্মে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে গ্যারেথ সাউথগেটের দল যখন খেলতে যাবে, তার প্রায় এক শতাব্দী আগে ১৯২৭ সালে সেখানে গিয়েছিল আরেকটি ব্রিটিশ দল। রাশিয়ার আমন্ত্রণে ইংল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বশীল সেই দলটি লিভারপুল স্ট্রিট স্টেশন থেকে রওনা দিয়েছিল।

আর তাদের প্রস্তুতি, তাদের বাহন সবই ছিল সেই গ্রীষ্মের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ দলের চেয়ে আলাদা। নিজের কাজের জায়গা থেকে ছুটি না পাওয়ায়, যাত্রার ঠিক আগের দিন চারজন খেলোয়াড়ের জায়গায় অন্য খেলোয়াড় নিয়োগ করতে হয়।

আর ১৪ সদস্যের প্রাথমিক দল নির্বাচিত হয়েছিল যাত্রার তিনদিন আগে শহরতলীর কাছের এক পার্কে ‘সম্ভাব্য’ এবং ‘হতে পারে’ এমন দুটি দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক ম্যাচের মাধ্যমে।

কিন্তু সেই যাত্রার উদ্দেশ্যও কম আকর্ষণীয় ছিলো না। এক মাসের বেশি সময় ধরে সাতটি ম্যাচ খেলা, আর মস্কো, সেইন্ট পিটার্সবার্গ, কারকিভ এবং কিয়েভের মত আধুনিক শহরে থাকা এসব ভাবনা ছিলো। কিন্তু এই দলটি মানব ইতিহাসের এক মর্মস্পর্শী এক অধ্যায়ের সাক্ষী হতে চলছিল।

দশ বছর আগে ভ্লাদিমির লেনিন রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব করের। কম্যুনিজমকে স্রেফ এক রাজনৈতিক তত্ত্বের বাইরে এনে বাস্তবে চর্চার পথ তৈরির মাধ্যমে, তিনি প্রতিশ্রুতি দেন সাধারণ মানুষ দেশের অর্থনীতি এবং নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

কিন্তু ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যুর পর জোসেফ স্ট্যালিন, বিশ্বে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে তৈরি হচ্ছেন, পরবর্তীতে যিনি দ্য গ্রেট টেরর বা অত্যন্ত ভীতির কারণ হয়ে উঠেছিলেন।

আর খেলাধুলার ক্ষেত্রেও ঐ সফর ছিল ঐতিহাসিক। ইংল্যান্ড এর আগে কখনো রাশিয়ার সাথে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি। আর এর পরেও ত্রিশ বছরের বেশি সময় খেলেনি পরস্পরের বিরুদ্ধে।

খেলোয়াড় ও ম্যানেজার জর্জ সিনফেল্ড, যিনি কারখানায় পিয়ানোর যন্ত্রাংশ বানাতে বেশি অভিজ্ঞ ছিলেন, তিনি পরে লিখেছেন, সোভিয়েত ফুটবলের মান সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না আমাদের।

তিনি বলেন, তারা ভেবেছিলো, তারা অনেক ভালো মানের কোন ফুটবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলবে। আমরা ব্রিটেন মানে ফুটবলের তীর্থভূমি থেকে এসেছি, রাশিয়ানরা ভেবেছিলো আমরা সবাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বা সেল্টিকের মানে খেলি। কিন্তু আদতে আমরা তা ছিলাম না।

এই দল যখন বার্লিন হয়ে তিনদিনের রাস্তা পেরিয়ে মস্কো পৌঁছল, তাদের স্থানীয় কয়েক শো মানুষজন অভ্যর্থনা জানালো। কিন্তু শুরুর ম্যাচে অন্তত ত্রিশ হাজার দর্শক ছিলো বলে ধারণা মিঃ সিনফেল্ডের।

প্রচণ্ড গরম আর অমসৃণ মাঠে ঐ ম্যাচে মস্কো ট্রেড ইউনিয়ন দলের কাছে ব্রিটিশ দলটি ১১-০ গোলে হেরে যায়।

বলের আকৃতি এবং রেফারির কঠোর আচরণকে এজন্য পরে দায়ী করা হয়েছিল। এরপরে ভেন্যু বদলাতে থাকে, কিন্তু ফল একই হতে থাকে। পরের পাঁচটি ম্যাচেও শোচনীয়ভাবে হেরে যায় ব্রিটিশ দলটি। শেষ ম্যাচটিতে ২-১ গোলে জয়ের দেখা পায় মিঃ সিনফেল্ডের দল।

তবে খেলার মাঠে হারলেও শ্রমিকদের নিয়ে তৈরি দলটি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা এবং কলকারখানা ঘুরে দেখেন। তারা সফর নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন।

এখনো এ বছরের গোঁড়ার দিকে রাশিয়ার সাথে ব্রিটেনের কূটনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি হয় তখনো শ্রমিকদের সংগঠন রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল।

সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যাকে বিষ প্রয়োগের ঘটনার উল্লেখ করে, ইংল্যান্ড থেকে যারাই রাশিয়া যাচ্ছেন, সবাইকে ব্রিটিশ বিরোধী সেন্টিমেন্ট বা হয়রানির ব্যপারে সাবধান করা হয়েছে। সূ্ত্র: বিবিসি বাংলা।

আজকের বাজার/এমএইচ