ইতিবাচক ধারায় পুঁজিবাজার

প্রায় ২০ দিন পর ইতিবাচক ধারায় ফিরলো পুঁজিবাজার। আজ মঙ্গলবার,২৫এপ্রিল সপ্তাহের ৩য় কার্যদিবসে দেশের দুই পুঁজিবাজারের সূচক ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। দিন শেষে ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ইসলামী ব্যাংকের কাঙ্খিত লভ্যাংশ ঘোষণা না করা এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের রাইট নিয়ে গেলো ক’দিন গুজবের প্রভাব পড়েছিল পুজিবাজারে। বিনিয়োগকারীসহ বাজার বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য,গেলো সপ্তাহের দিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের রাইট শেয়ার পাস হবে না, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে,দর কমে যায় লংকাবাংলার। ৩রা এপ্রিল লংকাবাংলার প্রতিটি শেয়ার ৬৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়। আর গতকাল ২৪ এপ্রিল লংকাবাংলার প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় মাত্র ৫১ টাকা ৪০ পয়সায়। গুজবের কারণেই শেয়ারের এই দরপতন বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এদিকে গেলো বছর থেকে ব্যবসায়িক আস্থা অর্জন করে পুঁজিবাজারের আর্থিকখাতের প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক। গেলো বছরের জুন থেকে ধীরে ধীরে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। যা এ বছর জানুয়ারিতে এসে ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬০ শতাংশ বেড়ে ৩০ থেকে ৪৮ টাকায় উঠে যায়। এরপর কিছুটা মূল্য সংশোধন হলেও, প্রায় প্রতিদিন আর্থিকখাতের এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪২ থেকে ৪৪ টাকার মধ্যে উঠা-নামা করে। কিন্তু গত ৩০ মার্চ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ মাত্র ১০শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষনা করার পর,আঘাত হানে এর শেয়ারের দরে। বিগত এক যুগের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দেয়ায় হতাশ হয়, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীরা। সে কারণেই শুরু হয় শেয়ারের দরপতন।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী হুসাইন ফয়সাল ও আল-আমিন আজকের বাজারকে বলেন,বাজারে এখন বিশেষ সার্পোটের অভাব। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অনুপুস্থিতি তুলনামূলক কম বলে মনে করেন তিনি। ফয়সাল বলেন,এখন শেয়ার কেনার সময়। কিন্ত বিনিয়োগ আটকে থাকায়,কেনাবেচা হচ্ছে না।

এদিকে স্টারলিং স্টকস এণ্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ফরহাদ হোসেন আজকের বাজারকে জানান,এখন শেয়ার কেনোর চেয়ে, বিক্রির চাপ বেশি।

পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শাজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী র্কমর্কতা (সিইও) মোঃ আনোয়ার হোসনে আজকের বাজারকে বলনে,পুঁজিবাজার তার নিজস্ব গতিতে ঘুরে দাঁড়াবে, আতঙ্কের কিছু নেই। তিনি মনে করেন, এরইমধ্যে যথেষ্ট মূল্য সংশোধন হয়েছে। যারা টেকনিক্যাল এ্যানালাইসিস করে তাদের অনেকেরই ধারনা,মার্কেট সার্পোট লেভেলে গিয়ে আবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে।

এরইমধ্যে গত সপ্তাহে সূচক সার্পোট লেভেলের (৫ হাজার ৬০০ পয়ন্টে) নিচে নেমে এলে,আস্থার জায়গাটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। তারপরও অনেক বিনিয়োগকারীর আশা ছিল, সূচক হয়তো ৫ হাজার ৫০০ পয়েন্টের নিচে নামবে না। কিন্ত ডিএসই ২৬ পয়ন্টে কমে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দেয়। সূচক আরও কমে যেতে পারে এমন আশংকায় শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির মাত্রা বেড়ে যায়। আর তাতেই শেয়ারের দরপতন ক্রমেই বাড়তে থাকে।

আনোয়ার হোসেন আজকের বাজারকে আরও বলনে,চলতি সপ্তাহে বেশিরভাগ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
স্টারলিং স্টকস অ্যান্ড সিকিউরিটিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী র্কমর্কতা (সিইও) এস এম নাসির উদ্দিন আজকের বাজারকে বলেন,পুঁজিবাজার ঢেলে সাজাতে হবে এবং বাজার আরও বড় করতে হবে। না হলে গুজবের হাত থেকে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে রক্ষা করা কঠিন হবে। মার্কেট ছোট,তাই গুজব বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে। তিনি আরো বলেন,বাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।

তিনি বলেন,কিছু বড় ব্রোকারেজ হাউজ শেয়ার কেনার তুলনায় বিক্রির করছে,যে কারণে সূচক কমছে। নাসির উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজার আরো বড় করতে হলে, ভালো এবং বড় কোম্পানিগুলোকে মার্কেটে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। সব মিলিয়ে শিগগিরই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করেন স্টারলিং স্টকস অ্যান্ড সিকিউরিটিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী র্কমর্কতা (সিইও) এস এম নাসির উদ্দিন।

আজকের বাজার:জেডএস/এলকে/এএস/২৫এপ্রিল,২০১৭