‘একযুগে কর্মক্ষেত্রে ১৩ হাজার ২১১ শ্রমিক নিহত’

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে দেশের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে গত ১২ বছরে ১৩ হাজার ২১১ শ্রমিক নিহত হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ১৮ হাজার ৯০ শ্রমিক।

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০১৭ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার,২৭এপ্রিল ডেইলি স্টার ভবনে ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি: অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার’ বিষয়ক সংলাপে এ তথ্য জানান, ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন।

যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে ওশি ফাউন্ডেশন এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিকের প্রাণহানির পর কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিটে পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজন ২০ হাজার শ্রম পরিদর্শক। কিন্তু কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে শ্রম পরিদর্শক আছেন ৫৭৫ জন।

কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আইনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এছাড়া শ্রমিক হতাহতের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে দেশীয় আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেওয়ার কথা জানান মুজিবুল হক। প্রতিমন্ত্রী বলেন, নারায়নগঞ্জ এবং টঙ্গীতে পেশাগত রোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আহত অক্ষম শ্রমিকদের জন্য অ্যাকসিডেন্টাল ইন্স্যুরেন্স নামের বিশেষ স্কিমের চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে পাইলট ভিত্তিতে স্কিমটি চালু করা হবে।

সংলাপে ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি: অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর পক্ষ থেকে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপন করেন সিনিয়র লেবার ইন্সপেক্টর এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আলবার্তো সারডা।

এ আর চৌধুরী রিপন বলেন, ওশি পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বছরের প্রথম ৩ মাসে পেশাগত দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০১ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৮ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ২২৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। আর আহতদের মধ্যে ৪৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৫৬ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর হিসাবে কর্মক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্ঘটনা ও পেশাগত রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ২৩ লাখ শ্রমিক মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন মারা যায় গড়ে ৬ হাজার ৩০০ শ্রমিক। এসব দুর্ঘটনায় বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশ অপচয় হয়। তবে বাংলাদেশে পেশাগত দুর্ঘটনায় জিডিপির কত শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে- সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ওশির ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস এম মোর্শেদের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন সাকি রিজওয়ানা, জাতীয় শিল্প, স্বাস্থ্য ও সেফটি কাউন্সিলের সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবু নাইম মো. শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও অধ্যাপক ড. রওশন মমতাজ।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/২৭এপ্রিল,২০১৭