এবার ঈদে দুর্ঘটনা কমলেও,দুর্ভোগ সীমাহীন

প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব এবং ভয়াবহ বন্যা ও প্রবল বর্ষণে সারা দেশের ৫০ শতাংশেরও বেশি সড়ক ও মহাসড়কে খানাখন্দ থাকলেও ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ আশংকার চেয়ে কম ছিল। একইভাবে নানা আতঙ্ক সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও তুলনামূলক কম ঘটেছে এবং নৌ ও রেলপথ ছিল দুর্ঘটনামুক্ত। তবে প্রবল স্ত্রোত ও নাব্যতা সংকটে পদ্মার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল বিপর্যস্ত হওয়ায় ঈদ-শেষে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ঢাকামুখি যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি (এনসিপিএসআরআর)। এছাড়া লঞ্চ ও বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং ট্রেন, লঞ্চ ও বাসের ছাদে ও পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহন ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।

৬ সেপ্টেম্বর বুধবার বেসরকারি সংগঠন,এনসিপিএসআরআর’র ঈদ-পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে এবারের ঈদে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সবগুলো বাস টার্মিনালসহ রাজধানীর সর্বত্র এবং মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল বলে দাবি করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। ২৮ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার কমলাপুর ও সেনানিবাস রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটসহ রাজধানীর সকল বাস টার্মিনালের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এবং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন নিউজপোর্টাল, জাতীয় দৈনিক ও আঞ্চলিক পত্রিকার অনলাইন ও মুদ্রিত সংস্করণে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, অনেক মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের ধীরগতি এবং ৩০ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে প্রতিবছর ঈদযাত্রায় বিভিন্ন মহলসহ ঘরমুখো সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনার আশংকায় উদ্বিগ্ন থাকলেও এবারের দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন ছিল। গার্মেন্টস শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রার প্রথম দিন ২৮ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর (ঈদের ছুটির পর দ্বিতীয় কর্মদিবস) পর্যন্ত ৯ দিনে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭২ জন নিহত ও ১৫৫ জন আহত হয়েছেন। অর্থাৎ এবার ঈদুল আজহায় দৈনিক গড়ে আটজন নিহত ও ১৭ জন আহত হন। আর ঈদুল ফিতরে গড়ে দৈনিক নিহত ও আহত হয়েছেন যথাক্রমে ১৫ জন ও ২৮ জন। ওই সময়ে আটদিনে সারা দেশে ১২০ জন নিহত ও ২২৬ জন আহত হয়েছেন।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দূরপাল্লার অধিকাংশ বাস ও লঞ্চ সার্ভিস ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছে। ঈদের দিন নিকটবর্তী দূরত্বের সাধারণ বাস ও লেগুনার মতো ক্ষুদ্র যানবাহনগুলো আদায় করেছে তিনগুণ ভাড়া। এছাড়া এ তিনদিন অনেক বাস সার্ভিসসহ সকল লঞ্চ ও ট্রেনের ছাদে এবং খোলা ট্রাকে যাত্রী বহন করা হয়েছে। একইভাবে ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখি যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের ছাদে এবং পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। তবে পদ্মায় আকষ্মিক প্রবল স্ত্রোত ও তীব্র নাব্যতা সংকটের কারণে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল সীমিত হয়ে যানবাহন পারাপারে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে সড়কপথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ঘর-ফেরত যাত্রীরা। পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়, বিকল্প দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে চরম অব্যবস্থাপনা ও তীব্র যানজটের কারণে ঢাকামুখি বাসগুলো পারাপারের অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকায় যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি পারাপারে অচলাবস্থার কারণে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ সড়কের বিকল্প হিসেবে নৌপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন কর্মস্থলে ফিরছেন। এই সুযোগে বরিশালসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর সকল লঞ্চ সার্ভিস ধারণ ক্ষমতার ৩-৪ গুণ যাত্রী বহন এবং দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। একইভাবে রাজশাহী ও রংপুর মহানগরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে ঢাকামুখি বাস সার্ভিসগুলো যাত্রীপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে রেলস্টেশন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো এবং ভ্রাম্যমান আদালত সক্রিয় থাকলেও বাড়তি ভাড়া আদায়, যানবাহনের ছাদে যাত্রী পরিবহন এবং রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ও মাদারীপুরের কাঠালবাড়ি ফেরিঘাটে সিরিয়াল ভঙ্গ করে ফেরিতে যানবাহন ওঠানো বন্ধ করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭