ওষুধ শিল্পে নগদ প্রণোদনা দেয়ার চিন্তা, এক বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে চান উদ্যোক্তারা

ওষুধ খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। দামের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক দেশে ওষুধ কোম্পানি বন্ধ হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে। তবে শ্রম তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় এ সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদ্যমান ১৪৪ রফতানি বাজারে আরও মনোযোগের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ওষুধের বার্ষিক রফতানি আয় ১০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাকের পর রফতানি আয়ের শীর্ষ খাত হিসেবে ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে এক আলোচনায় এসব মতামত এসেছে। তবে এ খাতের উন্নয়নে বিদ্যমান সংকট হিসেবে শতভাগ কাঁচামাল আমদানি-নির্ভরতা, সেকেলে ওষুধ নীতি, দক্ষ লোকবলের অভাব ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন বক্তারা।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এ সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় প্যানেল আলোচক ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির এবং ইউনিহেলথের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মোসাদ্দেক হোসেন।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে বলেছেন, ওষুধ রফতানি নগদ সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। এ বিষয়ে আগামী ৮ আগস্ট অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা।

অনেক দিন ধরে ওষুধ খাতের সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও রফতানি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না। গত অর্থবছরে ১৬ শতাংশ বেড়ে রফতানি হয়েছে ১০ কোটি ডলার। ওষুধকে অগ্রাধিকার খাত এবং প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করেছে সরকার।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ওষুধ বিশেষ পণ্য। দরের চেয়ে মানের বিষয়টিই এখানে মুখ্য। এজন্য কার্যকর জ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রয়োজন। মান ও সক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রয়োজন। এ কাজে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ওষুধকে প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ারের ঘোষণাকে অর্থপূর্ণ করতে সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজনের কথায় তিনি বলেন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জিএসকের উৎপাদন বন্ধ হলে এ খাতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, তারা পরিমাণে কম ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। দর প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় তারা ওষুধ উৎপাদন সরে আসছে। তবে হরলিকস এবং সেনসোডাইন উৎপাদন অব্যাহত রাখবে তারা। বিডা চেয়ারম্যান বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, আফ্রিকায়ও দুটি প্ল্যান্ট বন্ধ করে দিয়েছে জিএসকে।

ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশেও ওষুধ দামে সস্তা এবং মানে উন্নত। এ কারণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ওষুধের কদর আছে। আন্তর্জাতিক সনদপ্রাপ্ত বিশ্বমানের কারখানা রয়েছে এ দেশে। ফলে বর্তমানের রফতানি আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, শ্রমের ব্যয়ের কারণে অনেক দেশের ওষুধ কোম্পানি বন্ধ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব সমস্যা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মান এবং দরে বাংলাদেশের ওষুধ আকর্ষণীয়। তবে এ খাতের সমস্যা হচ্ছে, বিপণনে নেটওয়ার্কিং মজবুত নয়। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডেন্টস (এপিআই) পার্ক নেই। নতুন ওষুধ বাজারজাত করতে সনদ পেতে ৫ ১০ বছর লেগে যায়।

ইউনিহেলথের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিবেচনায় ওষুধের অন্যতম বড় সংকট কাঁচামালের পশ্চাত সংযোগ শিল্পে দুর্বলতা। তিনি বলেন, আমদানি-নির্ভরতা কমাতে এপিআই শিল্পপার্ক করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সব খাতের মতো বন্দর সংকটসহ অন্যান্য অবকাঠামো সংকটে ওষুধ খাতও ভুগছে।

অ্যামচ্যাম সভাপতি বলেন, স্পর্শকাতর পণ্য হলেও বাংলাদেশের ওষুধ আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে। অনেক ওষুধ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের ওষুধ প্রশাসনের সনদ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা চিকিৎসাপত্রে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের নাম প্রেসক্রাইব করছেন। তবে দেশের ওষুধ প্রশাসনের সনদ যাতে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।