কোটা আন্দোলনের নেতা সুহেলকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক এপিএম সুহেলকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সুহেল কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী লাকী আক্তারের বাসা থেকে ভোর রাতে তাকে তুলে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন লাকী।

লাকী তার ফেসবুকে জানিয়েছেন, আমার বাসায় ভোররাত সোয়া ৪টা নাগাদ ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। ৮-১০ জনের একটা দল আসেন তারা। শুরুতে তারা বেশ উত্তেজিত ছিলেন। আমি জানতে চাইলাম এত রাতে কোন অভিযোগে আমার বাসায় তল্লাশি করবেন তারা। তর্কা-তর্কির এক পর্যায়ে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। আমি বললাম আপনারা সকালে আসেন। অনেকক্ষণ বাক-বিতন্ডার পর অবশেষে তারা বাড়িওয়ালা আঙ্কেলকে নিয়ে আসলে সাড়ে চারটার দিকে আমি দরজা খুলি।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে আমার ডিপার্টমেন্টের ছোটভাই এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক সুহেল আমার বাসায় ছিল। তারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে বাসার কম্পিউটারের হিস্ট্রি চেক করেন। এছাড়া সুহেল যে রুমে ছিল সেখানে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালান। সুহেলের ব্যবহৃত একটি ফোন ছাড়া আর কিছুই তারা পাননি। প্রায় দেড় ঘন্টা তারা আমার বাসায় অবস্থানকালে সুহেলকে আলাদারুমে হাতকড়া পরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় আমাদের সব ফোনগুলো তারা জব্দ করে রাখেন। আমার ফোনও তারা চেক করেন। যদিও ঘরে প্রবেশ করার পর আমাদের কারও সাথে উত্তেজিত আচরণ করেননি তারা।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক এ সভাপতি লিখেছেন, সুহেলকে নিয়ে যাওয়ার আগে আমি জানতে চাইলাম ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী। তারা বললেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বাসায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের লিফলেট-পোস্টার আছে কিনা জানতে চান। বাসায় সেরকম কোনো কিছু না থাকায় আমি তাদের দেখাতে পারিনি। তবে সেজন্য তারা বাড়তি কোনো তল্লাশিও করেননি।

তিনি আরও লিখেছেন, যাওয়ার আগে সুহেল আমাকে অনুরোধ করেছে তার মাকে যেন কিছু না জানানো হয়। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা গেছেন। সম্প্রতি কোটা আন্দোলনে জড়িত থাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলারও শিকার হয় ও। এরপর এ ঘটনায় তার মা আরও ভেঙে পড়তে পারেন।

লাকী জানান, ঘটনা যা ঘটেছে তা-ই সবাইকে জানানোর চেষ্টা করলাম। আমি বা আমার পরিবার এ ঘটনায় মোটেও ভীত নই। কিন্তু যখন তখন সাদা পোশাকে নাগরিকদের ঘরে হানা দেওয়ার এই সংস্কৃতি একজন নাগরিক হিসেবে আমাকে শংকিত করে। তবে কি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত থাকলে মানুষকে এভাবে আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাতে হবে?

এর আগে গত ২৩ মে বিকালে পরীক্ষা শেষে ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে হামলার শিকার হয়েছিলেন জবি ইংরেজি বিভাগের ১০ ব্যাচের ছাত্র সুহেল। সুহেল তখন জানিয়েছিলেন, কোটা আন্দোলনের জন্য দ্বিতীয়বার তাকে মার খেতে হয়েছে। প্রথমবার চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারা হয়েছিল। দ্বিতীয়বারের মারধরে ঠোঁটের বাইরে ৯টা ও ভেতরেও দুটি সেলাই দিতে হয়েছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেতৃত্বের পাশাপাশি তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন।

আরএম/