খুলনায় সিবিএ নেতাদের ওপর হামলা; ২৬ শ্রমিক চাকরিচ্যুত

খুলনায় বন্ধ থাকা ক্রিসেন্ট জুট মিল চালু করাকে কেন্দ্র করে সিবিএ নেতাদের ওপর বদলি শ্রমিকদের হামলা এবং বাড়িঘর ভাংচুরের ঘটনায় মিলের স্থায়ী-অস্থায়ী ২৬ জন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

গতকাল ৮ অক্টোবর রোববার রাতে মিল কর্তৃপক্ষ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ পদক্ষেপ নেন। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে মিল প্রশাসন।

মিল চালুকে কেন্দ্র করে বদলী শ্রমিকরা মিলের সিবিএ নেতাদের ওপর হামলা চালায়। এতে সিবিএ’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। এক পর্যায়ে উশৃঙ্খল শ্রমিকরা সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদকের শ্বশুর বাড়ি এবং সহ-সভাপতির বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ৬ টায় সিবিএ নেতারা ক্রিসেন্ট মিল চালু করতে গেলে বদলি শ্রমিকদের একটি অংশ বাধা দেয়। এ সময় দু’ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে সিবিএ’র কার্যকরী সদস্য আলম শরিফ মিলন, সাবেক সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, ২নং মিলের তাঁত বিভাগের রিলিভার দেলোয়ার হোসেন, ১নং তাঁত ম্যাকানিক্যালের শ্রমিক মো. রাসেল, বদলী শ্রমিক মো. রিপন ও লিটন আহত হয়। সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে সিবিএ সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিজান, প্রচার সম্পাদক মো. হামিদ ফারুক, সাবেক সহ সম্পাদক ও ৮ নং আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবু হানিফ, সিবিএ সদস্য আহাদ আলীসহ প্রায় ২০ নেতা ও শ্রমিক লাঞ্চিত হন।

অপরদিকে, হামলার শ্রমিকরা সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেনের দিঘলিয়া উপজেলার শর্ষেপাড়া গ্রামে শ্বশুর বাড়ি ও সহ সভাপতি মো. সোহরাব হোসেনের দিঘলিয়ার মুন্সিপাড়ার বাসভবনে হামলা চালায়। এ সময় তারা বাড়ি ভাংচুর ও টিভি, ল্যাপপটপসহ আসবাব পত্র লুট করে নিয়ে যায়।

মিলে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা বাঁধিয়ে উৎপাদন বন্ধ ও অচল করে রাখার অভিযোগে স্থায়ী ও অস্থায়ী ২৬ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন স্থায়ী শ্রমিককে টার্মিনেশন এবং ১৮ জন অস্থায়ী শ্রমিকের গেট পাশ বতিল করা হয়।

চাকরিচ্যুত স্থায়ী শ্রমিকরা হলেন- ২নং মিলের মিল ম্যাকানিক্যাল বিভাগের চার্জহ্যান্ড মোহাম্মদ হোসেন, ১নং মিলের হেঁসিয়ান তাঁতের রিলিভার মিজানুর রহমান, ২নং মিলের কপ ওয়েন্ডিং বিভাগের ওয়েন্ডিং আনোয়ার হোসেন, ১নং মিলের স্পিনিং বিভাগের মো. আসাদ, ২নং মিলের ওয়েন্ডিং বিভাগের রোল ওয়েন্ডার মো. সাহিদুর রহমান, ১নং মিলের স্পিনিং বিভাগের মো. জাহাঙ্গীর, ২নং মিলের মোটা তাঁত বিভাগের মো. সাজেদুল ও ২নং মিলের প্রিপেয়ারিং বিভাগের ড্রইং ফিডার সিরাজুল ইসলাম। এছাড়া গেটপাশ বাতিলকৃত অস্থায়ী শ্রমিকরা হলেন- ইমরান, তারেক, শাহিন, রেজোয়ান, শাহিন, নাইম, আল আমিন, জুয়েল, সাগর, শিপন, রায়হান, শেখ ফরিদ, মাসুদ, নাইম, অপু, মাসুম ওরফে খুনি মাসুম, নাজমুল, রনি ও রাজু।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম হাজারী শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিল চালু করতে গেলে অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে মিলে অরাজকতা সৃষ্টি করে। তারা সিবিএ’র দুই নেতার বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) খালিশপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফ হোসেন বলেন, শ্রমিক সংঘর্ষ ঠেকাতে মিল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্রিসেন্ট জুট মিলের দু’ নেতার বাড়িতে হামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৮ সপ্তাহের বকেয়া মজুরী এককালীন পরিশোধের দাবিতে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা গত সপ্তাহের বুধবার থেকে আন্দোলনে নামে। মিল চালু ও শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন নিরসনে গত শনিবার রাতে খুলনা জেলা প্রশাসকের আহবানে সার্কিট হাউজে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ক্রিসেন্ট ও প্লাটিনাম জুট মিলে ৩ সপ্তাহের মজুরী প্রদান এবং আগামী দেড় মাসের মধ্যে সকল বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়। সে মোতাবেক রোববার সকালে প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলের সিবিএ নেতারা গেট সভার মাধ্যমে মিল চালুর ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেন। কিন্তু ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ’র পক্ষ থেকে গেট সভার মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানালে স্থায়ী ও অস্থায়ী কিছু শ্রমিক মিলে প্রবেশ করতে অন্য শ্রমিকদের বাধা দেয়। এমনকি তারা লাঠিসোটা নিয়ে সিবিএ নেতাদের ধাওয়া করে। যার সূত্র ধরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৯ অক্টোবর ২০১৭