গাজীপুরের বিন্দু বাড়ি গ্রামে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র মানমন্দির স্থাপন

জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নে বিন্দু বাড়ি গ্রামের বেনুর ভিটা নামক স্থানে দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে একটি গবেষণা কেন্দ্র মানমন্দির তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞান ক্লাব অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মৃধা বেনু। যে ক’জন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের হাত ধরে দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয় তাদের মধ্যে শাহজাহান মৃধা বেনু অন্যতম। ১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে দেশের প্রথম মানমন্দির স্থাপন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স ও বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শ্রীপুরের এই মানমন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে আর এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২০২২ সালে। ঘন সবুজ শালবন বেষ্টিত এই গ্রামে প্রায় ৮০ বিঘা জায়গায় অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এই মানমন্দির। যেখানে খুব সহজেই মহাকাশের চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্রকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়। এখানে রয়েছে ডরমেটরি এস্ট্রো অবজারভেটরি, এস্ট্রো উঠান এবং সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানচর্চার এক অনন্য স্থাপনা। চারতলা একটি ভবনের উপরে অবজারভেটরির অবস্থান। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপের মাধ্যমে রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এখানে আরো অত্যাধুনিক ১০০ ইঞ্চি ব্যাসের রিফ্লেক্টর টেলিস্কোপ সংযুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বেনু সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাসসকে জানান, তার স্বপ্ন ছিল দেশে এমন একটি গবেষণা কেন্দ্র হবে, যেখানে মহাকাশপ্রেমীরা উন্নত বিশ্বের মতো মহাকাশ গবেষণা করার সুযোগ পাবে। এদেশের ছেলেমেয়েরাও একদিন মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করবে। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য প্রস্তুত করেছেন পূর্ণাঙ্গ অ্যাস্ট্রো অবজারভেটরি (মানমন্দির)।
তিনি বলেন, দেশের যেকোনো প্রান্তের শিক্ষার্থীরা চাইলে এখান থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। কিছুদিনের মধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহীরা এখানে পুরোপুরি গবেষণা করার সুযোগ পাবেন। মহাকাশ গবেষকদের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, গ্রন্থাগার ও থাকার সুব্যবস্থা থাকবে। অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফির জন্যও থাকবে নানান সুযোগ সুবিধা। এখানকার অ্যাস্ট্রো উঠানের মনকাড়া কারুকার্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য হবে। জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি আর্চারি, মাউন্টেনিয়ারিং ও উড্ডয়ন বিদ্যার প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধাও থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে অবজারভেটরিটি পরিদর্শন করেন নাসার সাবেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মোরেনো ভ্যালি কলেজের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক ড. দীপেন ভট্টাচার্য ও মহাকাশ গবেষক ড. মাকসুদা আফরোজ।
এ বিষয়ে মাওনা মডেল কলেজের বাংলা প্রভাষক মিশকাত রাসেল বাসসকে বলেন, আমাদের দেশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এই মহাকাশ গবেষণা স্বপ্নের মতো ছিলো। এই মানমন্দির ঘুরে দেখে আমার মনে হলো সেই শূন্যতা এখন সহজেই পূর্ণতায় রূপ নেবে। (বাসস)