ঘূর্ণিঝড় রেমাল, চট্টগ্রামে প্রস্তুত ১৯৩৪ আশ্রয়কেন্দ্র, ২৯৫টি মেডিকেল টিম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় ৭৮৫টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ১১৪০টি বিদ্যালয় ও ৯ টি মুজিব কিল্লাসহ মোট ১৯৩৪টি স্থাপনা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এছাড়া সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দিয়ে ২৯৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়।
শনিবার দিবাগত রাতে অনলাইন মাধ্যমে জরুরি সভা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সভায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। বিশেষ করে সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, মিরসরাই, সীতাকু- ও কর্ণফুলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে (ইউএনও) বিশেষভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
সভায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে তীব্র জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকায় উপকূলবর্তী এলাকা এবং পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার, মোমবাতি, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন মজুত রয়েছে বলে অবহিত করেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৭৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও ১১৪০টি বিদ্যালয় ও ৯টি মুজিব কেল্লা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খোলা হয়েছে জরুরি কন্ট্রোল রুম। যার নম্বর-০২৩৩৩৩৫৪৮৪৩।
এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি, আর্বান ডিসপেন্সারি ৯টি এবং ৫টি জেনারেল হাসপাতালসহ মোট ২৯৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য প্রায় ৩ লাখ ট্যাবলেট ও ৪ লাখ খাবার স্যালাইন মজুত রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট ওষুধ, স্যালাইন, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখতে হবে। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইউএইচঅ্যান্ডএফপিওসহ সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো। দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। সাপে কাটা রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনম মজুত রাখতে হবে। অতি বৃষ্টির কারণে যেন জনগণের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দুর্যোগ পরবর্তী স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
সভায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জনপ্রতিনিধিদের নিজ এলাকায় অবস্থান করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে উপজেলাসমূহে অবস্থিত ডাকবাংলো ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ সময় জেলা প্রশাসক মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
জেলা প্রশাসন জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। যার নম্বর -০২৩৩৩৩৫৭৫৪৫।
সভায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, ফায়ার সার্ভিস এবং আনসারসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, উপকূলবর্তী উপজেলাগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন। (বাসস)