চট্টগ্রামে নিখোঁজ ৩ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

চট্টগ্রামে নিখোঁজ হওয়া ৩ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

শনিবার (৭ জুলাই) দুপুর দেড়টার থেকে আড়াইটার মধ্যে তিন মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের যৌথভাবে পরিচালিত উদ্ধার টিম।

একই স্থানে গত দুই সপ্তাহ আগে দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তারা নারায়নগঞ্জ থেকে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

ঘটনাস্থলে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশনের সিনিয়র কর্মকর্তা ওয়াসির আজাদ বলেন, শনিবার সকাল থেকে উদ্ধারকারী ডুবুরি দল তল্লাশি শুরু করে দ্বিতীয় দিনের মতো। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে সাইফুল ও ইয়াছিনের এবং আড়াইটার সময় আলাউদ্দিন মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মৃতদেহ তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা এখানে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করি। রাতে উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। শনিবার সকাল ১১টা থেকে আবার ডুবুরি দল উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে তাদের মরদেহ তিনটি পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করা হয়।

চট্টগ্রাম নগরের কোতয়ালী ঝাউতলা এলাকায় বাসিন্দা আলাউদ্দিন ও সাইফুল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। আর ইয়াসিন স্থানীয় ছাপাখানায় কাজ করতেন।

নিহত সাইফুলের ভাই আরিফ হোসেন বলেন, লেগুনায় তার ভাইসহ ২৩ জন একসঙ্গে ওই সৈকতে শুক্রবার সকালে বেড়াতে গিয়েছিল। ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে সমুদ্রে নেমে গোসল করার সময় একজন নিখোঁজ হন। তাকে খুঁজতে গিয়ে অপর দুজন নিখোঁজ হন। শনিবার বিকেলে তাদের মরদেহ ফায়র সার্ভিসের ডুবুরিরা উদ্ধার করেন।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, সমদ্রু সৈকতটি ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ায় সর্তকাতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দর্শনার্থীরা কোন বাধা মানছে না। এর ফলে সাগরে গোসল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। একই এলাকায় বেড়াতে এসে গত ২১ জুন গোসল করতে নেমে সমুদ্রে ডুবে নিখোঁজ হন নারায়নগঞ্জের দুই শিক্ষার্থী। একদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা।

নিহত আলাউদ্দিনের বাবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী চারুমিয়া জানান, তার ছেলে আলাউদ্দিনও তার মতই চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে নিয়োজিত ছিল। বন্ধুদের সাথে বাঁশবাড়িয়ায় সাগরে বেড়াতে গিয়ে শুক্রবার তার ছেলে সাগরের পানিতে ভেসে যায়। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

শনিবার তার ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল আলম বলেন, সমুদ্র সৈকতে সচেতনতা বাড়তে সতর্কমূল আরও সাইবোর্ড লাগানো হয়েছে।

তবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও এ বিষয়ে ইউএনওর কোন করনীয় নেই জানিয়ে তিনি মুঠোফোনে বলেন, এ দুর্ঘটনায় যদি কোন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হয় তা জেলা প্রশাসক করতে পারে।

উদ্ধার কর্মীরা জানিয়েছেন, একটি শিল্প গ্রুপ সাগরে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের ফলে বিশাল আকারের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে পর্যটকরা ওখানে গোসল করতে নামলে পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে একের পর এক পর্যটকদের মৃত্যু ঘটছে।

আজকের বাজার/একেএ