চাঁদপুরে ধরা পড়ছে ঝঁকে ঝঁকে রুপালী ইলিশ, কমেছে দাম

জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীতে গত ২-৩ দিন যাবৎ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ। এ কারণে বাজারে ইলিশের দাম আগের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে।

জেলে আকবর আলী জানান,‘মেঘনায় জাল ফেলে ২-৩ ঘণ্টা পরই দেখতে পান প্রায় পুরো জাল ইলিশে ভর্তি। পরে মাছগুলো আমিরাবাদ বাজারে মাছের আড়তে এনে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

আমিরাবাদ মাছের আড়তের ব্যবসায়ী মিঠু জানান, আড়তে আগে প্রতিদিন ৫০-১০০ কেজি ইলিশ বিক্রি হতো। এখন কয়েক গুণ বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। দামও আগের চেয়ে কমেছে, সাইজও ভালো। বেচা-বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

ছেংগারচর বাজারের দোকানদার মো. লাল মিয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার প্রায় এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছের হালি (চারটি) তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। অথচ এ মাছ চার-পাঁচ দিন আগে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ছিল।

উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নদীর পাড়ের আড়তগুলোতে ঘুরে দেখেছি কয়েকদিন থেকে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, দশানী, বাহাদুরপুর, মালোপাড়া, এখলাছপুর, মোহনপুর, আমিরাবাদ, জহিরাবাদ, চরওয়েবষ্টার, বোরোচর, চরউমেদ, বাহেরচর এলাকাসহ উপজেলায় ৮ হাজার ৩২৫ জেলে পরিবার রয়েছে। তারা যুগ যুগ ধরে মেঘনায় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মাছ ধরা ও বিক্রি করাই তাদের পেশা। নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে পরিবারের লোকজনের মুখে হাসি ফুটেছে।

চাঁদপুরের সর্ব বৃহৎ মাছ ঘাট ‘বড় স্টেশন রেলওয়ে মাছঘাটে’ সরেজমিনে দেখা যায়, ইলিশ মাছের প্রচুর আমদানি হচ্ছে। ৯০ শতাংশ মাছ দক্ষিণাঞ্চলের চরফেশন, ভোলা, রামগতি, নোয়াখালি, হাতিয়া ও আশপাশ এলাকার। প্রতিদিনিই প্রায় এক হাজার মণ ইলিশ মাছ এ ঘাট থেকে আমদানি হচ্ছে।
মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আ. খালেক মাল জানান, ধরা পরা মাছের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ মা ইলিশ। আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই ঘাটে মাছের ব্যবসা চলবে। এরপর ২২ দিনের মাছ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

তিনি আরও জানান, ৬০ জন বড় ব্যবসায়ীসহ প্রায় শতাধিক ছোট মাছ ব্যবসায়ী এ ঘাটে ব্যবসা করছেন। দিনমজুরের সংখ্যা হাজারের কম না। এখন তারা খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ইলিশ মাছগুলো ট্রলার, ট্রাক ও পিকআপে দক্ষিনাঞ্চলের জেলা থেকে এ ঘাটে আসে। এখান থেকে আবার এসব মাছ বিভিন্ন জেলায় এবং ঢাকার কাওরান বাজার টু আজমপুর পর্যন্ত বিভিন্ন বাজারে, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, বাইপাইল, টংগী, গাজীপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যায়।

চাঁদপুর ফিসারিজ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিস জানান, জাটকা ও মা ইলিশ নিধনের বিরুদ্ধে সরকারি নজরদারি বৃদ্ধি, ভ্রাম্যমাণ আদালত, জরিমানা, ও ব্যাপক জনসচেতনতার কারণে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। গত বছর পাঁচ লাখ ৩৩ মেট্রিক টন ইলিশ বেশি উৎপন্ন হয়েছে।

তিনি জানান, আসন্ন মা ইলিশের প্রজনন সময়ে ১৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ২২ দিন যেনো কেহ কোনো অবস্থাতেই নদীতে মা ইলিশ ধরতে না পারে এজন্য আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করিছি। অমাবস্যার সময় ইলিশ প্রজণন করে। একটি মা ইলিশে গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ রেণু থাকে।