জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি

এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর কাছে জেড গ্রুপের শেয়ারই সেরা। সম্প্রতি দেখা গেছে তারা জেড ক্যাটাগারির বাইরে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করতে মোটেও আগ্রহী নয়। এ ধরণের বিনিয়োগকারীদের অতি আগ্রহের কারণে প্রায় প্রতিদিনি জেড ক্যাটাগরির কোন না কোন শেয়ার দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদায়ী সপ্তাহে টপটেন দর বৃদ্ধির তালিকায় ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৯টি কোম্পানি উঠে এসেছে।

তবে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে অতিমাত্রায় আগ্রহ স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য কোনভাবেই সুখকর নয়–এমনটাই মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, স্বল্প মূলধনি, লোকসানি ও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়া মানে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়া। কিন্তু যারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের সমজদার, তারা বাজার বিশ্লেষকদের এই মন্তব্য মানতে রাজি নন। তাদের মতে, জেড গ্রুপের শেয়ারে যে পরিমাণ রিটার্ন পাওয়া যায়, অন্য গ্রুপের শেয়ারে সেটা পাওয়া যায় না্ । তাদের যুক্তি হলো, জেড গ্রুপের শেয়ার যেভাবে উঠানামা করে, অন্য গ্রুপের শেয়ার সেভাবে উঠানাম করে না। জেড গ্রুপের শেয়ার ধরে রাখলে লাভ হবেই হবে–এমনই দৃঢ় বিশ্বাস তাদের।

বিনিয়োগকারীদের আ্গ্রহের কারণে গত সপ্তাহে বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমলেও বেশিরভাগ দুর্বল মৌলভিত্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি ৫৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৭৩ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সে হিসেবে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন বেড়েছে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার টাকা বা ২৩.৬২ শতাংশ। এছাড়া গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে পরিমান লেনদেন হয়েছে তার ১.৯৩ শতাংশ অবদান রেখেছে ‘জেড’ ক্যাটাগরির।

বর্তমানে জেড ক্যাটাগরিতে ৪৭টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে বিদায়ী সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ, দুলামিয়া কটন, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, জুট স্পিনার্স, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, রহিমা ফুড, নর্দার্ন জুট, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলসের। এমনি কোম্পানিগুলো গত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরি ছাড়া বাকি চার ক্যাটাগরির তুলনায় টপটেন গেইনার তালিকায় অবস্থান করছে। এর মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ লিমিটেড। গত সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৫০.১৬ শতাংশ।

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুলামিয়া লটনের শেয়ার দর বেড়েছে ২৭.১৬ শতাংশ। তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা ইমাম বাটনের শেয়ার দর বেড়েছে ২৩.১৫ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে থাকা জুট স্পিনার্সের শেয়ার দর বেড়েছে ২২.৩৫ শতাংশ।

এছাড়া ৫ম স্থানে থাকা মেঘনা কনডেন্স মিল্কের শেয়ার দর বেড়েছে ২২.৩০ শতাংশ, ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা মেঘনা পেটের শেয়ার দর ১৪.৬৮ শতাংশ, ৭ম স্থানে থাকা রহিমা ফুডের ১০.২৭ শতাংশ, তালিকার ৯ম স্থানে থাকা আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৯.৮০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৫০ শতাংশ। এছাড়া গেইনার তালিকার ১০ম স্থানে থাকা শ্যামপুর সুগারের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৫৮ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্বল ও লোকসানি বেশিরভাগ কোম্পানিই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ার দর বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর তুলনায় বেশি বাড়ে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, পুঁজিবাজার এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। আর অতিমূল্যায়িত দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ আরও বেশি ঝু৭কিপূর্ণ। এখাতের শেয়ারে লাভের তুলনায় লোকসানের ঝুঁকি অতিমাত্রায় বেশি। সুতরায় বিনিয়োগকারীদের ভেবেচিন্তে এখাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৯ নভেম্বর ২০১৭