টাঙ্গাইলে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে খুশি নিয়োগ প্রাপ্তরা

নাজমুল হোসেনের বাবা আইয়ূব নবী পেশায় অটোরিকশা চালাক। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায়। ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে আনন্দিত নাজমুল ও তার পরিবার।
তিনি বলেন, ‘জীবনের কষ্টগুলো হয়তো এখন দূর হবে। বাবা যখন অটো নিয়ে সকালে বের হয়ে যায় তখন মনে হয় যে এই কষ্টের শেষ হবে কবে। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করিয়েছে। বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে একটি স্থানীয় কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে পুলিশে চাকরির জন্য আবেদন করি। ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি হবে কখনো কল্পনাও করি নাই। কিন্তু কোন লোক ধরতে হয়নি। বাড়তি আর কোন টাকা আমার লাগে নাই। পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়াতে মনে হচ্ছে বাবার কষ্ট একটু হলেও দূর করতে পারবো। সব সময় দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকবো।’
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সের ডিলশেডে ট্রেইনিং রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরোয়ার হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। ট্রেইনিং রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে ৯০ জন ১২০ টাকা ব্যয় করে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।
নাজমুলের বাবা আইয়ূব নবী বলেন, ছেলেকে নিয়ে খুবই চিন্তায় ছিলাম। মানুষের কাছে শুনি এখন সরকারি চাকরি নিতে গেলে টাকা লাগে, লোক লাগে। কিন্তু এখন দেখি সব ধারণা ভুল। মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি হবে কখনো চিন্তাও করি নাই। এতো সুন্দর ও সচ্ছভাবে পুলিশের চাকরি পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
জেলার ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের ঝলক ইট ভাটার শ্রমিক মোশারফ হোসেনের ছেলে বিপ্লব হোসেন সদ্য পুলিশে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমার বাবা ইট ভাটায় কাজ করেন ৩০ বছর ধরে। অনেক কষ্ট করে বাবা আমরা দুইভাইকে মানুষ করছেন। বাবার কষ্টের ফল এখন দিতে পারবো। তারাও অনেক খুশি হয়েছেন। ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশের চাকরি হবে তা কখনো কল্পনাও করি নাই। পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার সাকরাইল চরপাড়া গ্রামের মৃত পুলিশ সদস্য সুরমান আলীর মেয়ে সুমা আক্তার। পুলিশে নিয়োগ পেয়ে সুমা আক্তার বলেন, মায়ের ইচ্ছে ছিল বাবার মতো পুলিশ সদস্য হব। তাই ছোট বেলা থেকে মায়ের কথা অনুযায়ী চলাফেরা করেছি। আজ বাবার মতো পুলিশ সদস্য হওয়ায় নিজেকে যোগ্য সন্তান হিসেবে মনে করছি। বাবার যেমন ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার, তেমনি আমিও সেবা করবো।
মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরির বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, স্মার্ট পুলিশ গঠন করার জন্য আমরা যোগ্য প্রার্থীদেরকে বাছাই করেছি। আর এই কার্যক্রম চালু হয়েছিল গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। নিয়োগ বোর্ডের যে সদস্য ছিল সবাই একদম সচ্ছ ছিল। যারা চান্স পেয়েছে সবাই যোগ্য প্রার্থী। মাত্র ১২০ টাকায় নিয়োগ পেয়েছে। কোন প্রকার সুপারিশ ও লেনদেনের সুযোগ ছিল না। তিনি আরও বলেন, প্রথমে ৪ হাজার ২’শ জন আবেদন করেছিল। পরে ৩ হাজার ৮’শ জন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। সেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাছাই হয়েছিল ১ হাজার ৫৮ জন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ৩০২ জন থেকে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে ৯০ জনকে মনোনীত করেছি। এদের মধ্যে পুরুষ ৭৬ ও নারী ১৪ জন। (বাসস)