ডাকসু ভিপি নুরুল হকের ওপর হামলা

প্রতিকি ছবি
প্রতিকি ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হকের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে নুরুল হক সহ অন্তত ছয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, দুই পক্ষ মিলে মারামারি করেছে, তারা পরিস্থিতি শান্ত করেছেন।

এই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী, একটি অনলাইন সংবাদপত্রের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলছেন, ”রোববার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা ডাকসুর ভিপি নুরুল হকের কার্যালয়ে শিবির আছে বলে ইটপাটকেল মারতে শুরু করে।”

”এর খানিকক্ষণ পরে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ কয়েকজন নেতাকর্মী সেই কার্যালয়ে প্রবেশ করে নুরুলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বলেন। তখন নুরুল সনজিতকে বলেন, সাদ্দাম তো ডাকসু নেতা, কিন্তু আপনি কে? এই প্রশ্নে জবাবে সনজিত উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি কে, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝবি।”

”এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ভিপির কক্ষে ঢুকে হামলা করে। সেখানে তারা লাইট বন্ধ করে রড, বাঁশ, লাঠি দিয়ে হামলা করে। সাংবাদিকরা ভিডিও করার চেষ্টা করলে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়,” জানান সিরাজুল ইসলাম।

নুরুল হকের সঙ্গে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল সমাজসেবা সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হওয়া আখতার হোসেন বলছেন,”অতর্কিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের পরাজয়ের ক্ষোভ থেকেই তাদের এই হামলা। পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করে আমাদের অনেককে আহত করা হয়েছে, কয়েকজনকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে।”

তবে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম রাব্বানী বলছেন, ”এখানে ছাত্রলীগ কোন হামলা করেনি। নুরুল হকের সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিওর কারণে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন বিক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করেছে। বরং নুরুল হক বহিরাগতদের নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এখানে ছাত্রলীগের কেউ ছিল না”।

তবে বহিরাগতদের প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, আশেপাশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ডাকসু ভিপির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু তাদেরকেও মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

হামলা শুরুর প্রায় একঘণ্টা পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী ডাকসু কার্যালয়ে যান। তিনি আহতদের বের করে হাসপাতালে পাঠান। সে সময় ভিপির কক্ষ ভেতর থেকে আটকে রেখেছিলেন নুরুল হক ও তার নেতাকর্মীরা।

ড. গোলাম রব্বানী বলছেন, ”দুই পক্ষ মিলে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে ছিল। আমরা যাবার পরেও ডাকসুর ভিপি রুম খুলছিল না। আমরা বলার পর দরজা খোলে। কক্ষের ভেতরে অনেক ভাংচুর করা হয়েছে। সেখানে অনেক বহিরাগত ছিল। মারামারিতে অনেকে আহত হয়েছে দেখার পর আমরা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি।”

তিনি বলছেন, ”আজ যা ঘটেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে কাঙ্ক্ষিত আচরণ তাদের কারো মধ্যে দেখি নি। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর বহিরাগতদের নিয়ে মারামারি করবে, সেটা হয় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি অবহিত করবো এবং যেই দায়ী হোক না কেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো।”

এর আগেও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকবার ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন নুরুল হক।

ছাত্রলীগের সাথে বিশেষ করে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের সাথে ডাকসুতেই তার মতবিরোধের খবর নিয়মিতই আসছে গণমাধ্যমে।

এর আগে ইফতার কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও বগুড়ায় হামলার শিকার হলেন নুরুল হক নূর। তার ওপর হামলার ঘটনা ব্যাপক ভাবে উঠে এসেছে ফেসবুকেও।

ভিপি নুরুল হক নূর বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে যে আস্থা তৈরি করেছেন, তা নিয়েই ‘ছাত্রলীগ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে’।

নুরুল হককে ডাকসুতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে

ডাকসু সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলছেন, ”ডাকসুর সঙ্গে কোনরকম আলোচনা না করেই বহিরাগতদের ডাকসু কার্যালয়ে জড়ো করেছিলেন নুরুল হক। তাই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার কারণে কাল থেকে নুরুল হককে ডাকসুতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।

তিনি জানান, সোমবার ডাকসুতে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এরপর ডাকসুর প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে জানিয়ে দেয়া হবে।

কিন্তু ডাকসুর ভিপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা যায় কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”ডাকসুর বেশিরভাগ সদস্য যদি তাকে অবাঞ্ছিত বলে মনে করেন, তাহলে কেন করা যাবে না?”

তথ্যসূত্র-বিবিসি বাংলা

আজকের বাজার/এমএইচ