ঢাকায় পানি ফুটাতেই দৈনিক ৫৮ কোটি টাকার গ্যাস পোড়ে

ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি দুর্গন্ধ ও জীবাণুমুক্ত করতে প্রতিদিন পানি ফুটানোর কাজে দৈনিক গড়ে ৫৮ কোটি টাকার গ্যাস ব্যবহার করছেন ঢাকাবাসী।

৮ জুলাই শনিবার সংবাদ সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এ তথ্যটি জানানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, পানিতে কিছু সমস্যা থাকলেও, তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবু পান ও গোসলের কাজের জন্য প্রতিদিন পানি ফুটান নগরবাসী।

উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঢাকা ওয়াসা থেকে সরবরাহকৃত পানিতে প্রচুর দুর্গন্ধ ও ময়লা থাকে। এই পানি সরাসরি পান করা যায় না। এমনকি গোসল বা পোশাক পরিষ্কার করতে গেলেও এই পানির দুর্গন্ধ নাকে লাগে। তাই বাধ্য হয়ে নিয়মিত পানি ফুটাতে হয়।

অধিকাংশ পরিবার শুধু পান করার পানি ফুটালেও কিছু কিছু পরিবার তাদের গোসলের জন্য ব্যবহৃত পানিও ফুটিয়ে থাকে।

সুরাইয়া আখতার চিতশি রিমা নামে পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। প্রতিদিন পরিবারের সবার সকালের নাশতা শেষ হলেই তিনি গ্যাসের চুলায় পানি ফোটাতে হয়।

তিনি বলেন, ওয়াসার পানি সরাসরি পান করার মতো নিরাপদ নয়। আমি প্রতিদিন পরিবারের খাওয়ার পানির চাহিদা মেটাতে দুই দফায় প্রায় ৩০ মিনিট করে পানি ফুটাই। ফুটানো পানি পান করার আগে আবার তা পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রে দিয়ে পরিশোধন করা হয়। এই পানি পরিশোধন প্রক্রিয়ার কারণে পরিবারের খরচও বেড়েছে।

সুরাইয়া বলেন, পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসা টাকা নিচ্ছে। তাদের উচিৎ, নিরাপদ পানি সরবরাহ করা। কিন্তু সেটি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ তারা।

তবে রাজধানীর কিছু মানুষ সরাসরি ওয়াসার পানি পান করছেন। তাদের অনেকেই সারা বছর বিভিন্ন রোগে ভোগে বলে দাবি করেছেন সুরাইয়া আখতার।

এই পরিবারের মতো রাজধানীর অধিকাংশ পরিবারেই ফুটিয়ে পানি পান করা হয়। আর নিজেদের পানযোগ্য পানির চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করছেন তারা। এতে ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে সিলিন্ডার ব্যবহারকারী পরিবারগুলো পানি ফুটানোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে।

ওয়াসা কর্মকর্তাদের দাবি, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পান করার জন্য নিরাপদ। কিন্তু পাইপলাইনে ফুটো থাকায় অনেক সময় পানির সঙ্গে ময়লা চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে দূষিত পানি ওয়াসার পানিতে মিশে যাচ্ছে। এতেই পানি দূষিত হচ্ছে।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, ঢাকার ওয়াসার অবহেলার কারণেই ময়লা ও দূষিত পানি পাচ্ছে নগরবাসী। অনেক সময় পানিতে দুর্গন্ধও থাকে। তবু অন্য কোনো সংস্থান না থাকায় এই নোংরা পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সায়েদাবাদ পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ করা পানিতে কিছুটা খারাপ গন্ধ রয়েছে। তবে এই পানি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।

তিতাস গ্যাসের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রায় ১৭ লাখ ৬৯ হাজার বাড়িতে গ্যাসের (এক ও দুই চুলা) সংযোগ দেওয়া আছে। এক চুলায় প্রতি ঘণ্টায় ১২ কিউবিক ঘনমিটার গ্যাস পোড়ে। দুই চুলায় প্রতি ঘণ্টায় পোড়ে ২১ কিউবিক ঘনমিটার গ্যাস। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

সব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজধানীবাসী গড়ে প্রতিদিন যদি আধা ঘণ্টা করে পানি ফুটায়, তবে গড়ে দিনে তারা প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ ঘনমিটার গ্যাস পোড়ায়। আর এ গ্যাসের আর্থিক মূল্য ৫৮ কোটি টাকা।

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ৮ জুলাই ২০১৭