‘তিনটি বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ দুর্নীতিগ্রস্ত ইমরানকে ‘হিরো’ বানিয়েছে’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে সাবেক স্ত্রীর সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন ইমরান খান। দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান এবার বলেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জুতা পালিশের লোক দরকার ছিল। সেই লোক তারা পেয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। তাদের একটা ‘পুতুল প্রধানমন্ত্রী’ দরকার ছিল। ইমরান সেই জায়গাটা নিতে পেরেছেন।

পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট লালন করলেও ভোটের প্রচারে সেই বিষয়টি এড়িয়ে যান ইমরান খান এ নিয়ে স্বাবেক স্বামীর সমালোচনায় মুখ হয়েছেন সাংবাদিক রেহাম খান। বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে সেভাবে প্রচারে মুখ খোলেননি ইমরান। কারণ, সেখানে তাঁর অনেক বন্ধু আছেন। তাছাড়া ভারতে যথেষ্ট জনপ্রিয়ও ইমরান। মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জেতার পর। কারণ পাক সেনার নির্দেশেই ইমরান বললেন, কাশ্মীর আসল সমস্যা। ভারত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সমস্যা পাকাচ্ছে। এই কথাটা ভোটের আগে বলেননি তিনি। এখন পাক সেনাকে খুশি করতে জাতীয়তাবাদী নেতা সাজার চেষ্টা করছেন।

ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেহাম বলেছেন, ইমরান কী রকম দ্বিচারী দেখুন, নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে চেয়েছিলেন, তখন ইমরান তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি ভারতকে মোস্ট ফেভার্ড নেশন বা এমএফএন-এর তকমা দেওয়ারও তীব্র বিরোধিতা করে তা আটকে দেওয়ার মূলে ছিলেন তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান।অথচ ভোটে জিতেই সুর বদলে ইমরান বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চান তিনি। কিন্তু ভারতই নাকি আলোচনার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।

রেহামের ভাষ্য, পাক সেনার কথা মতোই চলবেন ইমরান। কারণ দেশ চালানোর বা রাজনীতি করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই ইমরানের। ইমরানকে ইসলামাবাদের মসনদে বসানোর পরিকল্পনা গত প্রায় তিন বছর ধরে করছিল পাক সেনা। নির্বাচন স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠুভাবে হলে এতো ভোটে জিততে পারতেন না সাবেক এ ক্রিকেট কিংবন্দী। ভারত হোক বা পাকিস্তান ইমরানকে পাক সেনা যা বলবে তিনি ঠিক সেই কাজটাই করবেন, কারণ, তাঁর নিজস্ব কোনও আদর্শ নেই।

পাকিস্তানের নির্বাচনের আগে তাঁর বই প্রকাশ ইমরানের ভাবমূর্তিতে কোনও দাগ লাগাতে পারেনি। সেই প্রশ্নের জবাবে রেহামের মন্তব্য, উপমহাদেশে এ ধরনের যৌন কেচ্ছা কোনো পুরুষের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে পারে না। অথচ কোনো মেয়ের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটলে ফল হয় ভিন্ন। রেহামের মতে, তিনটি বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ দুর্নীতিগ্রস্ত ইমরানকে পাকিস্তানে ‘হিরো’ বানিয়েছে।

এদিকে, ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিচ্ছেন ইমরান খান। ইমরানের নয়া সরকারে কারা থাকবেন, কাদের নিয়ে জোট সরকার গড়া হচ্ছে, সেই ছবিটা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ছোট ছোট দলগুলি নিয়ে জোট সরকার গড়ছেন তিনি তা প্রায় নিশ্চিত। জোটের প্রধান হচ্ছে তাঁর দল পাকিস্তান-তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

ডন নিউজ, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, জিও নিউজ, সামা টিভি সহ বেশ কিছু পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার গঠনের পরই মন্ত্রিসভা নিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে চান ইমরান। তাই ইমরানের ইচ্ছে মেনেই তাঁকে ১৪ আগস্টের আগে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানাতে চলেছেন পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন। তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাসিরুল মুল্ক জানিয়েছেন, ইমরান শপথ নিচ্ছেন ১৪ আগস্টের আগে। সে ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে।

২৫ জুলাইর নির্বাচনে ইমরানের দল পিটিআই জিতেছে ১১৫টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তাদের দরকার আর ২২টি আসন। এজন্য ইমরানের দল জিডিএ, এমকিউএম, এমএমএ, বিএপি-সহ ছোট দলগুলির সমর্থন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিরোধী আসনে বসতে চলেছে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ, বিলাওয়াল ভুট্টো, জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি। নওয়াজের দল জিতছে ৬৪টি আসনে। ভুট্টোর দল জিতেছে ৪৩টি আসনে। সূত্র-সংবাদ প্রতিদিন।

আজকের বাজার/এমএইচ