দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় ৫৩ হাজার ৯শ’ ৯৬ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

চলতি মৌসুমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় ৫৩ হাজার ৯শ’৯৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সরিষা তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরাও সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। সরিষা চাষে তেমন কোন খরচ নেই।সেচের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে অনেক চাষি সরিষা চাষে মনোযোগী হচ্ছেন- এমনটাই মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।বসত বাড়ির আশেপাশে অনাবাদি ও পতিত জমিতে সরিষা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। অনেক প্রান্তিক ও বর্গাচাষি অর্থকরী এ ফসল চাষে দিন দিন ঝুঁকে পড়ছেন বলে আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরিষার চাষ।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলা হচ্ছে-যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা,কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও মাগুরা।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায় মোট ৫৩ হাজার ৯শ’৯৬ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫হাজার হেক্টর জমিতে।ঝিনাইদহে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০হাজার ২শ’ হেক্টরে, মাগুরায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৩শ’৫০ হেক্টরে, কুষ্টিয়ায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৬শ’ হেক্টরে, চুয়াডাঙ্গায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২হাজার ৮শ’ ৯৬ হেক্টরে এবং মেহেরপুর জেলায় ৪ হাজার ৯শ’৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।আবাদকৃত জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-৯,১১,১৪,১৫,১৭ ও বিনা সরিষা ৪,৭,৯,১০ এবং টরি-৭ জাতের সরিষার চাষ বেশি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,যশোর সদর উপজেলার, বাঘারপাড়া উপজেলার এবং মাগুরা সদর উপজেলার মাঠের পর মাঠ শুধু হলুদ আর হলুদ।এ অঞ্চলের মাঠের পর মাঠ হলদে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর।সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিদের মধু সংগ্রহের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন অঞ্চলের দিগন্ত জোড়া মাঠ।সরিষার হলুদ ফুলে প্রকৃতির সৌন্দয যেমন বেড়েছে তেমনি অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্নে বিভোর কৃষাণ-কৃষাণীরা।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা জানান,কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সরিষা চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ,পরামর্শ,মাঠ দিবস,উঠান বৈঠক,নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।সরিষা চাষে অন্য ফসলের তুলনায় খরচ কম। সরিষায় পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। ফলনও বেশি। সরিষার খৈল গরুর খাবার হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।বাজারে সরিষার চাহিদা ব্যাপক থাকায় এ অঞ্চলে সরিষার চাষ দিন দিন বাড়ছে বলে তিনি জানান।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: শরিফুল ইসলাম জানান,আমন ধান ওঠার পর ইরি-বোরো ধান রোপণের আগে জমি অলস পড়ে থাকে।এ সময় সরিষা চাষ হয়।সরিষা চাষে একদিকে যেমন তেলের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন কৃষকরা, অন্যদিকে জমিতে জৈব সারের ঘাটতি পূরণ হয়ে থাকে।