দিনাজপুরে ২৬ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

চলতি রবি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় জেলা কৃষি অধিদপ্তর ২৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অনুকূল আবহাওয়া ও সুষ্ঠু পরিবেশ থাকায় জেলায় ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সবজি চাষে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ অর্জিত হয়েছে ।
গতকাল রোববার বিকেলে সরজমিন দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে অর্জিত শিমের সবজি বাগানে মনোরম দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। সাদা এবং বেগুনি রঙের মনোমুগ্ধকর ফুলে প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সেজেছে। রবি মৌসুমে গ্রামের সবজি ক্ষেতে এমন মনোরম দৃশ্যে ভরে উঠেছে দিনাজপুর বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের মাঠ। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিম ক্ষেতগুলো ফুলে ফলে ভরে উঠেছে। ক্ষেতের সৌন্দর্য আবহমান গ্রাম বাংলার এক অন্যরকম দৃশ্যকে তুলে ধরছে।
সরজমিনে জানা গেছে, সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের উলিপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামের মাচায় উঠা শিমের সবুজ বাগান। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে শিম চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।কৃষক সিরাজুল ইসলাম এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি চলতি ও রবি মৌসুমে তার নিজস্ব ৩০ শতক জমিতে বাঁশের মাচা দিয়ে শিম চাষ করেছেন।দেশি জাতির শিম রবি মৌসুমীর শুরু কার্তিক মাসের শেষ থেকে তার শিমের মাচায় ফলন আসা শুরু করেছে। মৌসুমীর শুরুতে ১৫০ টাকা কেজি ধরে শিম বিক্রি করেছেন। এখনো বাজারে তার শিম ৩০ টাকা কেজি দরে পাইকারের কাছে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের শিমের মাচা থেকে দু মণ করে শিম বিক্রি করেন। মাসে তার ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা শিম বিক্রি থেকে আসে। তার অর্জিত শিম শুধু দিনাজপুরে সীমাবদ্ধ নয়। পাইকেররা তার জমি থেকে শিম নিয়ে ট্রাকযোগে ঢাকায় পাটাচ্ছেন।
একই পদ্ধতিতে শিম চাষ করেছেন পার্শ্ববতী খানপুর গ্রামের আবু আলী, ফরহাদ হোসেন ও জাকির হোসেন। তাদের মতো এ এলাকার গ্রাম গুলোতে অনেকেই শিম চাষি রয়েছে।
শিম চািষরা জানান, এখাকার শিম দেশের প্রত্যেকটি জেলায় চাহিদা রয়েছে। এ শিমের খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। দেশী জাতির শিম গ্রাহকদের কাছে খুবই পছন্দনীয়। দিনাজপুরের শিমের নাম শুনলেই ক্রেতারা আগ্রহের সাথে ক্রয় করে ।
বাইরের পাইকারেরা এ জেলার শিম চাষিদের ক্ষেত টাটকা কিনে নিয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্রতিদিনের উঠানো শিম পাইকারেরা দেশের যেকোনো জেলার সরবরাহ করতে পারে। ফলে দূরের ক্রেতারা টাটকা শিম খেতে পারেন।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া জানান, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ২৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অনুকূল আবহাওয়া ও সুষ্ঠু পরিবেশে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় লক্ষ্য মাত্রার অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ অর্জিত হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে শিম একটি উল্লেখযোগ্য উৎপাদনশীল সবজি ।
তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে জেলার সবগুলো উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে আগাম শীতকালীন সবজি শিম। এবারে বাম্পার শিমের ফলন ও বাম্পার দাম পেয়েছে শিম চাষিরা।
জেলার বিরল উপজেলার ফারাক্কা বাঁধ গ্রামের শিম চাষি নুরুল ইসলাম জানান, এবছর দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। এতে জমি তৈরি, হালচাষ, রাসায়নিক সার, জৈব সার, কীটনাশক, মাচায় ও শ্রমিকের খরচসহ মোট ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে শিম বাগানে ফলন ভালো হয়েছে।শিমের ক্ষেত ফুলে ও ফলে এখনো ভরপুর। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভালো দামে শিম বিক্রি করেছি। শুরুর দিকে প্রতি কেজি শিম সপ্তাহ জুড়ে পাইকারি বাজারে ১২০-১৫০টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত শিম আসায় প্রতি কেজি শিমের দাম ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি। আরও শিম রয়েছে বিক্রির জন্য।
তিনি বলেন, শিম বাগানে প্রতিনিয়ত কয়েক জন শ্রমিক কাজ করে। সপ্তাহে ৩ দিন ক্ষেত হতে শিম সংগ্রহ করে বাজার জাত বিক্রি করি। ৪-৫দিন পর কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। কারণ মাঝে মধ্যে পোকার আক্রমণ দেখা যায়। শিম গাছের বয়স বাড়ার সাথে অধিকাংশ পাতা হলুদ হয়ে যায়। এর পরেও বাম্পার ফলন হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি।
জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: শরিফুল ইসলাম জানান,উপজেলার বিভিন্ন এলাকা শিম চাষের জন্য বেশ সম্ভাবনাময়ী। এটা শীতকালীন সবজি হলেও এখন প্রায় সব মৌসুমেই চাষ হচ্ছে। এ উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে আগাম শিমচাষ করছে চাষিরাা। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা শিম চাষে ঝুঁকছে। শিম চাষে রোগবালাই,পোকা আক্রমণে রক্ষায় বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার এবং ভালো শিম উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদানে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। (বাসস)