দিনাজপুর সদর উপজেলার পল্লীতে মাছ চাষে স্বাবলম্বী গৃহবধূ সাদেকা বানু

দিনাজপুর সদর উপজেলার পল্লীতে মাছের পোনা চাষ করে ব্যাপক সাফলতা পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা গৃহবধূ  সাদেকা বানু। বর্তমানে তিনি ৩১ একর জমিতে ২২টি পুকুরে জি-থ্রি রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করে  স্বাবলম্বী হয়েছেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে  কথা হয় গৃহবধূ সাদিকার সাথে।  তিনি তার মাছ চাষের পুকুর গুলো সরজমিনে দেখান। তিনি  জানান  তাকে মাছ চাষ কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা  করছেন তার স্বামী বেলাল হোসেন। প্রায় ২০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক তার মাছ চাষে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তার পুকুরে মাছ চাষের কাজ করে  ২০টি পরিবারে, কর্মসংস্থানের  ব্যবস্থা হয়েছে । তার মাছ চাষে সফলতা দেখে ওই এলাকার অনেক বেকার যুবক মাছ চাষে ঝুঁকছেন। নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুর এখন বছরে  ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করেন ।

গৃহবধূর সাদিকা বানু জানান গত  ২০১৫ সালে  দিনাজপুর সদর উপজেলার  মালিগ্রামে দু’টি পুকুর লিজ নিয়ে তিনি রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, সাদাপুটি, তেলাপিয়া পোনা উৎপাদন শুরু করেন। প্রথম বছরে সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি। পরের বছর গ্রামের আরও ৩টি পুকুর লীজ নিয়ে মাছের পোনা উৎপাদন বৃদ্ধি করেন ।এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে । বর্তমানে নিজ গ্রামসহ পার্শবর্তী এলাকা সদর উপজেলার  বড়গ্রাম ও কমলপুরে ৩১ একার জমিতে ২২টি পুকুরে জি-থ্রি রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করছেন।
সাদেকা বানু জানায়, এ মাছের পোনা চাষ ও বিক্রি করে দুটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেকে পড়া-লেখা করাচ্ছি। তাকে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন দেখছি। ২ টি পুকুর থেকে আমার এখন ২২টি পুকুরে মাছ চাছ করছি । ৩১ একার জমিতে ২২টি পুকুরের মধ্যে ৩টি পুকুরে গত বছর থেকে জি-থ্রি রুই মাছের পোনা উৎপাদন করছি। এতে অনেক সাফল্য এসেছে।

তিনি  বলেন, জি-থ্রি পোনা মাছের চাহিদাও অনেক। আমার , সব খরচ বাদ দিয়ে এখন বছরে আয় হয় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। , আরো কিছু পুকুরে এ জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করবো।
স্বামী বেলাল হোসেনও অন্যপেশা ছেড়ে স্ত্রী’কে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। পুকুরগুলো তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন তিনি। গত বছর থেকে পরীক্ষামূলক ৩টি পুকুরে ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে । এতেও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। প্রচলিত রুই মাছের চেয়ে শতকরা প্রাায় ৩০ ভাগ বেশি বৃদ্ধি পায় জি-৩ রুই । জি-৩ রুই পোনার ব্যাপক চাহিদা থাকায় পোনা মাছ বিক্রেতারা তার পুকুরে আসে। তার পুকুরের পাছের পোনা জেলা ছাড়িয়ে সারাদেশে সরবরাহ হচ্ছে ।

সরজমিনে গিয়ে পুকুর পাড়ে কথা হয় পোনা মাছ নিতে আসা অনেকের সঙ্গে । বাই-সাইকেলের পেছনে বড় সিলভারের হাড়ি বেখে তার ভেতরে পোনা মাছ নিয়ে হাড়ির মুখে লাল-সাদা কাপড় পেচিয়ে তারা ছুঁটে চলেন গ্রাম থেকে গঞ্জে পোনা মাছ সরবরাহে। তাদের  একজন পোনা মাছ ব্যবসায়ীরা নুরুল ইসলামের সাথে  কথা হয়। তিনি  জানান, ‘এখন জি-৩ রুই এর পোনার অনেক চাহিদা। বিত্রি করে লাভ ভালো হয়। সপ্তাহে ৩/৪দিন  পোনা মাছ বাইরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি   করি। এতে যা লাভ পাই,তাদেই সংসার চলে।’

নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুকে এবিষয়ে প্রথম থেকেই সহায়তা করে আসছে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (এনজিও),মহিলা বহুমূখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন। মাছের পোনা উদ্যোক্তা তৈরিতে মহিলাদের দিয়ে সমিতির মাধ্যমে কাজ করছে,প্রতিষ্ঠান দু’টি। শ্যামলী মহিলা সমিতি নামে এমন একটি সংগঠনের সদস্য সাদেকা বানু। যার সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৯৪০ জন।মহিলা বহুমূখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের মৎস্য কর্মকর্তা মো.রায়হান আলী জানান,‘সাদেকা বানু তাদের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে তাকে সহায়তা করছি আমরা।তিনি বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করলেও গত বছরেই প্রথম আমরা তাকে পরীক্ষামূলকভাবে এক কেজি ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর রেনু দেই পোনা উৎপাদনের জন্য। তারপর তিনি আরো ২ কেজি ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর রেনু ক্রয় করে পুকুরে পোনা উৎপাদনে নামে। এতে তিনি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তার পোনা এখন জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।’তাকে সব রকম সহযোগিতা দিচ্ছে.দিনাজপুর জেলা মৎস্য বিভাগ।

দিনাজপুর জেলা  মৎস্য কর্মকর্তা মো.আশরাফুজ্জামান জানান, ওয়ার্ল্ডফিশ উদ্ভাবিত ‘তৃতীয় প্রজন্ম’ বা জি-৩ রুই এর পোনা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন,নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানু। তার সাফল্যে এখন অনেকে অনুপ্রাণিত। আমরা সবরকম প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করছি। অন্যরাও চাইলে এ সহায়তা পাবে। আমরা চাই নারীরা আরো এগিয়ে আসুক এধরনের কার্যক্রমে। এসব কাজে তাদের সাফল্য পাবার বেশি সুযোগ থাকে।’নারী উদ্যোক্তা সাদেকা বানুর সাফল্য এখন অনেকের অনুপ্রেরণা। তার সাফল্য দেখে অনেকে এখন মাছ চাষে ঝুঁকছেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে ছুঁটে আসছেন তার মাছের খামার দেখার জন্য। (বাসস)