নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাব বাছাইয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ

নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বেসরকারি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির দেওয়া প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে দেখতে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিপি) নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে ওই কমিটি সর্বাধিক যোগ্য প্রস্তাবগুলোর একটি তালিকা (Short List) তৈরি করে তা মন্ত্রণালয়কে দেবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক লোডশেডিং এর প্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তার আলোকে মন্ত্রণালয় নতুন কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে উৎপাদন বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ওই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, যাতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই ৩০০০ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাব অনুসারে, বেসরকারি খাতে ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ১০০০-১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সরকারের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৫০০ মেগাওয়াট।

কোনো দরপত্রে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বরাদ্দ করা হবে।

এর বাইরে দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাব বাছাই করা হবে, যেগুলোর মাধ্যমে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

উল্লেখ, গত মাসের শেষভাগে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য দেশের কিছু অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করে। নির্ধারিত সময় (২৫ জুন, ২০১৭) পর্যন্ত কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া সরাসরি দর কষাকষি ও আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে ২১টি প্রস্তাব জমা পড়ে। এদের প্রস্তাবিত উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫৪০ মেগাওয়াট। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশিরভাগই ফার্নেস অয়েল চালিত, কয়েকটি আছে ডিজেলভিত্তিক।

তবে পরে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নিজে থেকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রস্তাব জমা দেয়। এ ধরনের প্রস্তাবের সংখ্যা ১৪ টি। আলোচিত ৩৫ কেন্দ্রের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

২৫ জুনের পরে জমা দেওয়া প্রস্তাবগুলোর বেশিরভাগই নতুন প্রতিষ্ঠানের, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাদের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সতর্কভাবে প্রস্তাব বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব কোম্পানির অভিজ্ঞতা আছে, যাদের সুনাম আছে এবং যে কোম্পানিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে কখনোই জরিমানা দেয়নি-সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে সামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, শাহজিবাজার, বারাকা পাওয়ার, ডোরিন গ্রুপের মতো পুরনো ও বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার খান ব্রাদার্স নামের অখ্যাত ও বিদ্যুৎ খাতে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে আবেদনকারীর তালিকায়। আবেদনকারীদের মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি অথবা তাদের প্যারেন্ট কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড পাওয়ার যৌথভাবে ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে মিডল্যান্ড পাওয়ার এককভাবে প্রস্তাব করেছে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের।

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বারাকা পাওয়ারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বারাকা পতেঙ্গার নামেে চট্টগ্রামের সাউথ পতেঙ্গায় ১১৫ মেগাওয়াটের একটি আবেদন জমা দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অপর এক কোম্পানি ডরিন পাওয়ারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ঢাকা নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশনস লিমিটেড মানিকগঞ্জে ২১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চায়।

সামিট গ্রুপ গাজীপুরের কড্ডায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি পরিচালিত হবে ফার্নেস তেল দিয়ে। সামিট করপোরেশন এটি বাস্তবায়ন করবে। এর সঙ্গে তালিকাভুক্ত সামিট পাওয়ারের কোনো সম্পর্ক নেই।

ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ ময়মনসিংহে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তাব করেছে। এর সঙ্গে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কোনো সম্পর্ক নেই।

কেরানীগঞ্জে ৫০০ মেগাওয়াট ও ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে যথাক্রমে অ্যাক্রন ও এপিআর।

দেশ এনার্জি প্রস্তাব দিয়েছে সিরাজগঞ্জে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের।

ওরিয়ন ও সামুদা পাওয়ারের প্রতিটি খুলনায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে। ওরিয়ন শান্তাহারেও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রিসিসন্স পাওয়ার চট্টগ্রামে ১৫০ মেগাওয়াট, মেগাওয়াট, এনার্জিপ্যাক ঠাকুরগাঁওয়ে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায়।

পাওয়ার সোর্স সিদ্ধিরগঞ্জে ১২০ ও দাউদকান্দিতে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী।

কনফিডেন্স পাওয়ার রংপুর ও বগুড়ায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেছে।

এগ্রিকো কক্সবাজারে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায়।

খান ব্রাদার্স নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী। এর সঙ্গে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ কোম্পানি বা তার স্পন্সরদের মালিকানাধীন গ্রুপের কোনো সম্পর্ক নেই।

ঈদের ছুটি শেষে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব জমা দিয়েছে, সেগুলোর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, বরাদ্দপত্র পাওয়ার পর ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু করার জন্য ৬ মাস সময় পাবে। আর ফার্নেস তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সময় পাওয়া যাবে ৯ মাস। এমন স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদনে আসা বেশ কঠিন কাজ। কেবল দক্ষ ও অভিজ্ঞ কোম্পানির পক্ষেই হয়তো এটি সম্ভব হতে পারে।

আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ১৫ জুলাই ২০১৭