‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি অনুসরণ করছে চট্টগ্রামের সব সরকারি অফিস

চট্টগ্রামের প্রায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠান কঠোরভাবে ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি, নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতিমালা অনুসরণ করছে। তবে জনসমাগমের স্থান বিশেষ করে মার্কেট ও পার্কে মাস্ক পরার ব্যাপারে কোনো ধরণের বাধ্যবাধকতা দেখা যাচ্ছে না।

গত ২৫ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য নির্দেশনা জারি করা হয়। সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, স্কুল এবং ধর্মীয় ও সকল জনসমাগম স্থলে মাস্ক ছাড়া কেউ যেন প্রবেশও করতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারি আরোপের নির্দেশ দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করা হবে বলে জানানো হয়। উল্লেখ্য, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে গত জুলাই মাসে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।

গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামের অবস্থা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে এ নীতিমালা মানা হচ্ছে। কোনো-কোনো প্রতিষ্ঠানে আরো আগে থেকে এ নিয়ম চালু রয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও জনসমাগমের স্থানগুলোতে এখনো এ নীতিমালা মানা হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল্লাহ আজ বাসস’কে জানান, ‘আমরা গত বুধবার থেকে কঠোরভাবে এ নির্দেশনা মেনে চলছি। সেবা তো দূরে থাক, মাস্ক ছাড়া কেউ ওয়াসা ভবনের ভিতরেও প্রবেশ করতে পারেন না। স্টাফরাও যেন কোনোভাবেই ঢিলেমি দিতে না পারে সেদিকেও তীক্ষè নজর রয়েছে আমাদের।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বাসস’কে বলেন, ‘নির্দেশনা জারির পরপরই সিডিএ ভবনের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মাস্কের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে আমরা কম্পিউটার প্রিন্টআউট লাগিয়েছি। স্টিকার ছাপাতে দিয়েছি। শিগগির সবখানে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বাসস’কে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে আমরা সচেতন। সরকারের নির্দেশনা-সম্বলিত স্টিকার ছাপিয়ে এ সপ্তাহের মধ্যে দুই ভবনসহ চসিকের সব অফিস ও স্থাপনাতে সাঁটিয়ে দেয়া হবে। এ সপ্তাহের মধ্যে আমরা সকল অফিস স্টাফ এবং সেবাপ্রার্থীদের নির্দেশনা মানার ব্যাপারে কঠোর হবো। আমরা বেশ কিছু মাস্কও বানাবো। স্টাফ এবং সেবাপ্রার্থী ও পথচারীদের মাস্ক পরা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ প্রয়াস নেবো।’

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ জাফর আলম বাসস’কে বলেন, ‘কোভিডের প্রকোপ শুরুর পর থেকে বন্দর ভবনে মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বন্দরের কোনো স্টাফ বা সেবাপ্রার্থী মাস্ক ছাড়া গেট দিয়েও প্রবেশ করতে পারেন না। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে অথারাইজড অফিসার বন্দর এলাকায় ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। মাস্ক না পরলে জরিমানাও করা হয়।’

জাফর আলম অবশ্য স্বীকার করেন, ‘বন্দরের অফিসে যতোটা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হয়, শেডে ততোটা মানা হয় না। কিছু কিছু শ্রমিক অনভ্যাস বা গরমের কারণ দেখিয়ে মাস্ক পরা থেকে বিরত থাকেন।’

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘আমি শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডেরও সভাপতি। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে বন্দরের কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে তার পরিবার আর্থিক সহায়তা পাবে। কিন্তু পুরো করোনাকালে কোনো শ্রমিক পরিবার থেকে এ রকম দাবি আসেনি। এতে বুঝা যায়, এ পর্যন্ত করোনায় একজন শ্রমিকেরও মৃত্যু হয়নি। তবে, বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত মিলিয়ে বন্দরের ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন।’

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাপরিচালক (প্রশাসন) ফিরোজ আহমেদ বাসস’কে বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া কেউ কর্ণফুলী গ্যাসের অফিসে ঢুকতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবে সেবাপ্রাপ্তির জন্য ডেস্ক পর্যন্ত তার পৌঁছানোর সুযোগ নেই। অভ্যন্তরীণভাবেও আমরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার সুবিধাগলো নিশ্চিত করছি। কেউ যেন অজুহাত দেয়ার সুযোগ না পান।’

তবে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে মোটেও সচেতনতা নেই চট্টগ্রামের মার্কেটগুলোতে। মালিক স্টাফরা যেমন মাস্ক পরেন না, তেমনি ক্রেতাদেরও সরকারি নির্দেশনা মানানোর কোনো চেষ্টা বা উদ্যোগ মার্কেট কর্তৃপক্ষের দেখা যায় না। কয়েকটি মার্কেটে গেটের কাছে স্যানিটাইজার অথবা লিকুইড এন্টিসেপটিক স্প্রের ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ মার্কেটে তাও নেই। এর মধ্যে সেন্ট্রাল এসির মার্কেটগুলো বেশি বিপজ্জনক বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সচেতন কোনো ক্রেতা মাস্ক পরার ব্যাপারে দোকান মালিক বা স্টাফদের অনুরোধ জানালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাত্তা দেয়া হয় না।

নগরীর পার্কগুলোর অবস্থাও মার্কেটের মতোই। আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দর্শনার্থী মাস্ক পরে এসেছেন। ফয়’স লেকের অবস্থাও একই রকম। তবে চিড়িয়াখানা ও আগ্রাবাদ শিশু পার্কের অবস্থা তুলনামূলক ভালো।

স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে ব্যাংকের শাখাগুলোতে কঠোর নজরদারি লক্ষ্য করা যায়। মাস্ক, টেম্পারেচার মনিটর, স্যানিটাইজার স্প্রে এবং ভিতরে সোশ্যাল ডিসট্যান্স সাধ্যমতো মানানোর চেষ্টা দেখা যায়।

এ ব্যাপারে সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদুল আমিন বাসস’কে বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসচেতনতার পাশাপাশি ব্যবসায়িক দিকটিকেও প্রাধান্য দিচ্ছি। ব্যাংকে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে গ্রাহকরা ওই ব্যাংকের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। সংক্রমণের আশঙ্কায় আসতে চাইবেন না। এতে গ্রাহক-বিমুখতা সৃষ্টি হবে। ফলে আমাদের চেষ্টা থাকে গ্রাহক যেন আমাদের স্বাস্থ্যবিধির উদ্যোগে সন্তুষ্ট হতে পারেন।’

কোভিড-জয়ী ব্যাংকার, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ওআর নিজাম রোড ব্রাঞ্চের ডেপুটি ম্যানেজার রুবেল সাহা বাসস’কে বলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিইনি। এতে আমিসহ কয়েকজন স্টাফ ভুগেছি। এখন স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানা ও গ্রাহককে মানানোর ব্যাপারে আমরা কঠোরতা অবলম্বন করছি।’