পাটের পাতা থেকে হচ্ছে চা : যাচ্ছে জার্মানিতে

দেশে পাটের পাতা থেকে ‘সবুজ চা’ উৎপাদন শুরু হয়েছে৷ এরইমধ্যে তা রপ্তানি হচ্ছে জার্মানিতে৷ তবে বড় পরিসরে উৎপাদন শুরু করতে আরো সময় লাগবে৷ সেজন্য জামালপুরে একটি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে৷

দেশে পাট ‘সোনালি আঁশ’ হিসেবে পরিচিত৷ এক সময় পাটই ছিল দেশের বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের প্রধান পণ্য৷ পাটের আঁশের সেই সোনালি অতীত না থাকলেও পাটের পাতা তৈরি করেছে এক নতুন সম্ভাবনা৷ পাট পাতা শাক হিসেবে খাবার প্রচলন অনেক আগে থেকেই৷ কিন্তু এই পাট পাতা থেকে ‘চা’, অর্থাৎ এক ধরনের পানীয় উৎপাদন শুরু হয়েছে৷ এখন ছোট অল্প করে এই উৎপাদন চললেও বড় আঙ্গিকে উৎপাদনের জন্য কারাখানা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷

২০১৬ সালে পাট পাতা থেকে এই অর্গ্যানিক চা উৎপাদনে সাফল্য লাভের প্রথম দাবি করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট৷ এরপর ঢাকায় গুয়ার্ছি অ্যাকুয়া অ্যাগ্রো টেক নামক একটি প্রতিষ্ঠান পাটের পাতা দিয়ে তৈরি অর্গ্যানিক চা জার্মানিতে রপ্তানি শুরু করে৷ এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ইসমাইল হোসেন খান৷ এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে গেছে৷ আর ইসমাইল হোসেন খানকে করা হয়েছে সরকারে নতুন পাট পাতা থেকে চা তৈরি প্রকল্পের উপদেষ্টা৷

শুক্রবার জামালপুরের সরিষাবাড়ী এলকায় এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে৷ উদ্বোধন করেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম৷ এখানে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি কারখানা নির্মাণ করা হবে৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন,‘‘চা শিল্পে যোগ হচ্ছে পাটের পাতা থেকে চা৷ এতে পাট ও চা শিল্প সমৃদ্ধ হবে৷ এই এলাকার বহু মানুষের বাড়তি কর্মসংস্থান হবে৷ পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে পাটকে নানাভাবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে৷ নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হচ্ছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় নতুন উদ্ভাবন এই সবুজ চা৷ ফলে সোনালি আঁশের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে৷’’

এ প্রসঙ্গে সোমবার বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা এরইমধ্যে ছোট পরিসরে উৎপাদনে চলে গেছি৷ করিম জুট মিল এবং প্রকল্পের উদ্ভাবক ইসমাইল হোসেন খানের ঢাকার উত্তরায় ছোট একটি কারখানায় আমরা এই পাট পাতার চা উৎপাদন করছি জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহায়তায়৷ এরইমধ্যে আমরা ৮ থেকে ১০ টন পাট পাতার চা উৎপাদন করেছি এবং তা জার্মানিতেই ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে রপ্তানি করা হয়েছে৷ সরিষাবাড়ীতে আমাদের কারখানা হলে আমরা বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাব৷ দেশের বাজারে এই চা বিক্রি হবে আর বিদেশে তো রপ্তানি করা হবেই৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই চায়ের স্বাদ একদম গ্রিণ টি’র মতো৷ আর দামও হবে সাধারণ চায়ের মতোই৷’’

চায়ের গুনাগুন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ছোট বেলায় দেখেছি কোনো রোগ বালাই হলে শিশুদের পাটের পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে খাওয়ানো হতো৷ পাট পাতার ভেষজ গুণ আছে৷ এই চা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিষেশ উপকারী হবে৷ আমরা এরই মধ্যে এটা বাজারজাত করার সব ধরনের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনুমোদন পেয়েছি৷’’

প্রকল্পের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন খান শুক্রবার সরিষাবাড়ীতে বলেন, ‘‘পাটের পাতা থেকে পানীয় (সবুজ চা) উৎপাদনের এই উদ্যোগ সরিষাবাড়ী থেকে শুরু হলো৷ এখানকার চা শুধু বাংলাদেশেই নয়, দেশের বাইরেও রপ্তানি হবে৷ চলতি বছরের শেষদিকে ভবন নির্মাণ শেষ হলে সবুজ চা উৎপাদন শুরু হবে৷’’

তবে তিনি এই চা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজী হননি৷ প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি না পেলে বিস্তারিত কিছু বলবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের মধ্যে পাট পাতার চা বাংলাদেশেই প্রথম উৎপাদন হচ্ছে৷ নতুন কারখানায় বড় আকারে উৎপাদনে যেতে কমপে দু’বছর লাগতে পারে৷ আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই প্রকল্পে কাজ করছি৷ আমিই এর উদ্ভাবক৷’’
জানা গেছে, তোষা পাটের পাতা থেকে এই চায়ের
স্বাদ ভালো ৷ তবে দুধ মিশিয়ে এই চা পান করা যাবে না৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে
আজকের বাজার: ওএফ/২৩ জানুয়ারি ২০১৮